বরিশালে সাংস্কৃতিক কর্মী নিপার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

News News

Desk

প্রকাশিত: ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় সামসুন্নাহার নিপা (২৫) নামে সাংস্কৃতিক এক কর্মীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে বরিশাল নগরের উত্তর মল্লিক রোডের বাসা থেকে তার উদ্ধার করা হয়।

মৃত সামসুন্নাহার বরিশাল নগরের উত্তর মল্লিক রোডের জাহান ম্যানসনের মৃত ফজলুল করিমের মেয়ে। করোনা মহামারির সময় তার মা মারা যায়। এরপর পিতা-মাতাহীন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে নিপা বোন ডালিয়ার সঙ্গে থাকতেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকলিমা বেগম জানান, ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় নিপার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নিজের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নিপা। আর ফাঁস দেওয়ায় গলায় একটি কলো দাগ ছাড়া আর কোনো চিহ্ন নেই।

তিনি আরও বলেন, নিপার উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হবে।

এদিকে বাসায় বোন ডালিয়া ঘুমিয়ে থাকায় কিছু টের পায়নি বলে জানিয়েছেন।

তিনি জানান, সকালে ঘুম ভেঙে বোনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। আর কী কারণে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন নিপা তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে এসআই আকলিমা জানিয়েছেন।

নিপা বরিশাল নগরের একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির এমবিএ পাস করা ছাত্রী এবং উদীচী ও বরিশাল নাটকের সদস্য। এছাড়াও নিয়মিত আবৃত্তি করতেন বলে জানিয়েছেন উদীচীর বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন।

নিপা আবৃত্তিতে বিশেষ অবদান রাখায় জিয়াউল হক স্বর্ণপদক-২০২২ লাভ করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নিপার ফেসবুক ঘেটে দেখা গেছে, ৮ ঘণ্টা আগে (দুপুর ১২টা ১৯) সর্বশেষ স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিপা। সেখানে লিখেছে ‘সব প্রস্থান বিদায় নয়…’। এর আগে, ২৫ জুন তার ৫৯টি ছবি পোস্ট করেছিলেন নিপা। একইসঙ্গে তিনি স্টোরিতে ‘I QUIT…’লিখেছেন।

এর আগের দিন ২৪ জুলাই একটি পোস্ট দিয়েছেন নিপা। সেখানে লিখেছে ‘পোস্ট দেখলাম একটা ছেলে আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে আবার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট করছে। কোন মানুষই মরতে চায় না। তারপরেও ঠিক কতটা যন্ত্রণায় থাকলে এমন কাজ করে যে পরিস্থিতিতে না পরে সে বুঝবে না। পোস্ট কেন করছে ঠিক জানি না, হয়তো তখনো তার বাঁচার ইচ্ছেটা ছিল, হয়তো চেয়েছিল তার যন্ত্রণা কেউ বুঝুক। উনি বেঁচে গেছে। অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলেছে।

স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছে। তবে আমার মনে হয় উনি মরে গেলেই আসলে বেঁচে যেতো। না তার মানে আমি সবাইকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিচ্ছি না। আমরা মানুষ চলে গেলে আফসোস করতে পারি, বেঁচে থাকার জন্য মোটিভেট করতে পারি কিন্তু সেই মানুষটার যন্ত্রণা লাঘব করে শান্তিতে বাঁচার পথটুকু বলতে পারি না।

উনাকে যারা বাঁচিয়েছে তারা বড় জোর একসপ্তাহ পাশে থেকে সাপোর্ট করবে। ব্যস্ত দুনিয়ায় সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। উনি আবার যন্ত্রণায় ভুগবে, আবার আত্মহননের পথ খুঁজবে। এর শেষ কোথায়? কেন মানুষ অন্য মানুষের বাঁচার আকুতি ভুলে আত্মহনন কেন করে সেটার কারণ খুঁজে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না?

কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম জানান, প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। মযনাতদন্ত প্রতিবেদন এলে নিশ্চিত বলতে পারবো।

সূত্র : বাংলানিউজ