ঝালকাঠিতে বেড়েছে নদীর পানি, ৫০ গ্রাম প্লাবিত

News News

Desk

প্রকাশিত: ৯:২৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপ, পূর্ণিমার জোয়ার এবং তিন দিন ধরে অব্যাহত মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের কারণে ঝালকাঠির প্রধান তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।

স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলার সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীর পানির উচ্চতা গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিষখালীর ত্রি-মোহনায় বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা ছিল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে ঝালকাঠিসহ উপকূলীয় ১৫ জেলা। আবহাওয়ার এই সতর্ক বার্তার পর থেকে জলোচ্ছ্বাসে আতঙ্কে আছে জেলার নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।

বিশেষ করে বেড়িবাঁধহীন কাঠালিয়া উপজেলার ১৫ গ্রামের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কারণ তাদের রয়েছে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানা সিডরের বিভীষিকাময় রাতের অভিজ্ঞতা।

এদিকে রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঝালকাঠিতে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ শুরু হয়ে টানা ৪ দিন ধরে চলছে। বাতাসের সাথে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদীর পাড় উপচে জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় কাঁঠালিয়া উপজেলায় ডুবেছে ১৫টি গ্রাম।

নলছিটি, রাজাপুর ও সদর উপজেলায় ডুবেছে আরও ৩৫টি গ্রাম। এছাড়া অনেক স্থানে আমনের বীজতলা ও সবজির বাগান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজ ও সবজির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলেন, বিষখালীর কাঁঠালিয়া অংশে বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষায় নিম্নচাপ হলেই বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। যা গত দুই মাস আগেও তলিয়েছিল। জরুরিভাবে কাঁঠালিয়া অঞ্চলে বিষখালীর তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।

অপরদিকে টানা তিনদিন থেমে থেমে বৃষ্টি ও নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিষখালি নদীর রাজাপুর অংশে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার মঠবাড়ি এলাকায় বাদুরতাল লঞ্চঘাটের পল্টনটিসহ পাশের ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর থেকে বাদুরতলা এলাকায় নদী তীরের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কয়েক দশক ধরে এই এলাকায় ভাঙন লেগে থাকায় বর্ষার মৌসুমে নদীর তীরবর্তী এই ঐতিহ্যবাহী বাজারের ব্যবসায়ীদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই সরকারি বিদ্যালয়, মসজদি ও বাজারের পুরো অংশ ও রাস্তাঘাট নদীর স্রোতে হারিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক নাসির হাওলাদার, জুয়েল শরীফ, শাহজাহান শরীফ, জামাল হাওলাদার, আবু খলিফা ও বাবুল ঋষি বলেন, বিকেল ৩টার পরে আস্তে আস্তে নদীর পাড় দেবে যায়। তখন আমরা মালামাল সরাতে থাকি। কিন্তু মালামাল সরিয়ে নেওয়ার আগেই হঠাৎ দোকান ঘরগুলো ভেসে যায়।

মঠবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল হাওলাদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাদুরতলা বাজারের দোকানগুলো ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আজকে হঠাৎ ছয়টি দোকান বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ওই বাজারের অনেক দোকান ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েক দফা জিওব্যাগ ফেলেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান খান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাউবোর ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, বিষখালীর তীরে বেড়িবাধঁ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলেই ডিজাইন ডাটা পাঠানো হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, পানি বৃদ্ধি যদি অতিমাত্রায় হয়, সেক্ষেত্রে নিম্নাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন