নির্দেশ থাকলেও বাজারে কমেনি সয়াবিনের দাম

News News

Desk

প্রকাশিত: ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম কমায় দেশের বাজারেও লিটারে ১৪ টাকা কমানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত না মেনে ব্যবসায়ীরা আগের দামেই সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন।

নতুন মূল্য নির্ধারণ করা তেল সোমবার (১৮ জুলাই) বাজারে আসার কথা থাকলেও শুক্রবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত তা আসেনি। দোকানিদের স্টকে থাকা পুরনো তেল সেই আগের দামেই কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পাশাপাশি গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে কাঁচা মরিচ ও মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে।

গত ১৭ জুলাই সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। পরদিন সোমবার থেকেই নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা।

নতুন দাম নির্ধারণ করা তেল বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেন, নতুন করে বাজারে কোনো তেল আসেনি। আমাদের কাছেও তেলের তেমন একটা স্টক নেই; যা আছে সবই পুরনো দামের তেল। এ তেল দিয়ে আগামী দু-চার দিন চলতে পারব। অগ্রিম টাকা দিলেও ডিলাররা নতুন তেল দিচ্ছে না।

কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিস্ট্রিবিউটরদের স্টকে থাকা তেল শেষ না হওয়ার আগে বাজারে নতুন তেল আসার সম্ভাবনা নেই; অর্থাৎ লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা তেল বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে। সে কারণে বাজারেও তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর শান্তিনগর, রামপুরা, মালিবাগ ও কারওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের দামে তীরের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ টাকা, রূপচাঁদা ২ লিটার ৩৯৮ টাকা, ফরচুনের রাইচব্যান্ড ৫ লিটার ১ হাজার ১৩০ টাকা, ফ্রেশ ১ লিটার ২০০ টাকা, আধা লিটার ১০৫ টাকা। আবার অনেক ব্যবসায়ীকে নতুন নির্ধারণ করা দামেও তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজার করতে আসা ফার্মগেটের বাসিন্দা আনিন বিল্লাহ ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা খারাপ। তারা যেকোনো মূল্যে মানুষের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এদের বলা চলে এ সময়ের দাদনখোর।

নতুন মূল্য নির্ধারণের তেল বিক্রি না হওয়া নিয়ে কথা হয় শান্তিনগর মক্কা ট্রেডার্সের কর্ণধার নয়ন সরকারের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির লোকজন অগ্রিম তেল দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। কিন্তু বর্তমানে তেলের দাম কমলেও তাদের অগ্রিম টাকা দিয়ে এখনো তেল পাইনি। তারা বলেছে, তেল আসতে আরও এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।

রামপুরা বাজারের তৃপ্তি স্টোরের মালিক হেলাল বলেন, ‘কোম্পানির লোকজন কয়েক দিন যাবৎ তেল দিচ্ছে না। অথচ দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা দ্রুত চলে আসে। আর এখন দাম কমায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এবার কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে তেল চাইলে তারা বলছেন, পুরনো তেল আগে বিক্রি করেন। কোম্পানিগুলোর অবস্থা হলো, দিন দিন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার মতো।

নতুন মূল্য নির্ধারণের তেল না পাওয়া গেলেও ৩১ জুলাই থেকে সয়াবিন ও ৩১ ডিসেম্বর থেকে খোলা পামওয়েল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এদিকে নতুন তেল নিয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীর বলছেন, ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, বাজারে নতুন মূল্য নির্ধারণী তেলের সংকট নেই। স্টকে থাকা পুরনো তেলও বাজার সমন্বয়ে নতুন দামেই বিক্রি হচ্ছে।

চাঁদপুর জেনারেল স্টোরের এক বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে তেলের সংকট নেই। আমাদের কাছে নতুন তেল রয়েছে। কিছুটা লস হলেও বাজার সমন্বয় করতে পুরনো তেল নতুন দামে বিক্রি করছি।

গতকাল রাজধানীর শান্তিনগর, রামপুরা, মালিবাগ ও কারওরান বাজারের কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মান ও বাজারভেদে ১০০-১৪০ টাকার কাঁচা মরিচ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকায়; অর্থাৎ প্রতি কেজি মরিচে দাম অন্তত ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে।

এ ছাড়া অন্যান্য সবজির মধ্যে শসা ৪০, প্রতি হালি কাঁচকলা ২০, ঢেঁড়স ৩০, টমেটো ৮০, চিচিঙ্গা ৩০, কচুর ছড়া ৪০, পটোল ৩০, পেঁপে ৩০-৩৫, কাঁকরোল ৩০, কাঁঠালের বিচি ৩০, বরবটি ৪০, গাজর ১২০, লতি ৪৫-৫০, মুলা ২৫-৩০ ও মানভেদে কাঁচা মরিচ ৮০-১৪০ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা।

চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহে চালের দামে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। ১০-১২ দিন ধরে অপরিবর্তিত দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে থেকে চালের বাজার বাড়েনি এবং কমেনি।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৮, বিআর আটাশ ৫২, মানভেদে নাজির শাইল ৬২-৮৪ টাকা, হাসকি ৭৬, চিনিগুড়া (পোলাও) ১০৬, আতব চাল ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মাছে অন্তত ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া রুই মাছ চলতি সপ্তাহে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কাতল, তেলাপিয়া, পাঙাশ, বাগদা চিংড়িসহ অন্তত ১০ ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বড় কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৬০ টাকায়।

গত সপ্তাহের ৩০০ টাকার কোরাল গতকাল ৩৩০, ২৫০ টাকার মৃগেল ২৮০, ৬১০ টাকার বাগদা চিংড়ি ৬৫০, ২০০ টাকার কার্প ২২০, ৬৫০ টাকার ছোট কোরাল ৬৮০ টাকা। ছোট আকারের ৪-৫টি ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর একটু বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০-১১০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ-১৫শ টাকায়।

মাছ বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের পরে বাজারে এখনো মাছের সরবরাহ বাড়েনি। চাহিদার তুলনায় খুব কম মাছ বাজারে আসছে। আড়তগুলোতে চাহিদার তুলনায় মাছের সংকট থাকায় হঠাৎ করে দাম বেড়েছে মাছের।

মুরগির বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছেন ১৫০ টাকায়। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। মুরগির মাংসের মতো অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০, ছাগলের মাংস ৬০০ ও খাসির মাংস ৯৫০-১০০০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

সূত্র : দেশ রূপান্তর