বরিশাল নগরীতে কৌশলে সম্মোহিত করে ছিনতাই, টার্গেট নারীরা

News News

Desk

প্রকাশিত: ৯:০২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : সাবিনা ইয়াসমিন, পেশায় একজন শিক্ষিকা, থাকেন বরিশাল নগরের নবগ্রাম রোডের বটতলা এলাকায়। সন্তানকে কোচিং থেকে আনার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে বটতলা বাজারের সামনে যেতেই সম্মোহন করে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েন গত ৩ মার্চ সকালে।

ঘটনার শুরুতে এক যুবক আনন্দ বেকারি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা জানতে চান সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে। তিনি চিনেন না বলে জানালেও বিভিন্ন কথা বলে কৌশলে তার গতিরোধ করে। পরে ওই যুবক সাবিনা ইয়াসমিনকে জানান, তার মা অসুস্থ কিছু বেকারির কেমিক্যাল ঢাকা থেকে নিয়ে আসছে যেগুলো বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা করাবেন।

তবে ওই যুবক বরিশাল শহরের কিছু চিনে না বলে সাহায্য চান। সাবিনা ইয়াসমিন বটতলা এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরামর্শ দিতেই অন্য আর একজন লোক এসেও ছেলেটিকে সাহায্য করতে বলেন।

তখন সাবিনা ইয়াসমিনের কিছুটা সন্দেহ হলেও দুর্বৃত্তদের কৌশলের কাছে তিনি হেরে যান এবং কোনো এক সময় নিজের মনের অজান্তে হাতে থাকা স্বর্ণের চুরি, আংটি খুলে দিয়ে দেন। আর যখন তিনি স্বাভাবিক হয়ে বুঝতে পারেন তখন আর কাউকে আশপাশে খুঁজে পাননি।

এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সবকিছু এত দ্রুত হয়েছে কিছু যাচাই করার সুযোগ হয়নি। প্রথম ছেলেটি একটা সময় বার বার বলছিলেন বেকারির কেমিক্যাল বিক্রির জন্য আপনিও সঙ্গে চলেন নয়তো আমাকে মেরে ফেলবে, মায়ের চিকিৎসা হবে না।

তখন খুব খারাপ লাগছিল। এরমধ্যে অন্য আরেক লোক এসে বললো সাহায্য করতে, এর কিছুক্ষণ পরে আরেক জন এসে প্রথম ছেলের মোবাইল ফোন ও আমার সঙ্গে থাকা অলংকার খুলে দিতে বললো। ওদের কথা মতো সব খোয়ালাম।

এরপর বটতলা চৌরাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে গেলাম, তাদের কথা মতো বটতলা ফাঁড়িতে এরপর তাদের কথামতো কোতোয়ালি থানায় গেলাম। তবে ওই দিন আর কেউ আমার লিখিত অভিযোগ নেয়নি, তবে ঘটনার প্রায় একমাস পর ১ এপ্রিল (সোমবার) লিখিত অভিযোগ (সাধারণ ডায়েরি) নিয়েছে। আমি চাই অপরাধীদের বিচার হোক এবং আর কারও সঙ্গে এমনটা না হোক।

সাবিনার মতো গত ২৬ মার্চ সকালে একই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছি একই ঘটনার শিকার হন মায়া নামে এক নারী। তার স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান, মায়ের সাহায্যের কথা বলে সম্মোহন করে বটতলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে গোড়াচাঁদ দাস রোডের একটি মাদরাসার গ্যারেজে তার স্ত্রী মায়া নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে অচেতন করে দেড় ভরির স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। স্ত্রী মায়ার জ্ঞান ফেরার পর অত্র এলাকায় ওদের কাউকেই পাননি তিনি। এ ঘটনায় ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মাদরাসা ও একটি দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন, যেখানে তাদের চেহারাও দেখা গেছে।

তিনি বলেন, এ শহরে চাকরির জন্য এসেছি, তাই মামলা করিনি আর মালামালও হয়তো ফেরত পাবো না জানি, তবে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে। এদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর আমি সেটাই চাই।

এদিকে সর্বশেষ ১ এপ্রিল বিকেলে সফি মিয়ার গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা রওশন আরা বেগমের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তার ছেলে রিমন সিকদার জানান, তালতলী গ্রামীণ ব্যাংকের অফিস থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন তার মা।

ফেরার পথে এক লোক ব্যাংকের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে তার মাকে লাল রঙের মোটরসাইকেলে তুলে বাসার সামনে নিয়ে আসেন। এরপর ব্যাংক থেকে বেশি টাকা দিয়েছে জানিয়ে মাকে গুনতে বলেন, মা গুনতে গেলে তার কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে চলে যায় ওই দুর্বৃত্ত। মা তার মোটরসাইকেল ধরে রাখার চেষ্টা করলে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন বলেও জানান সফি মিয়া।

তিনি বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক কাউনিয়া থানা পুলিশকে জানিয়েছি, তাদের মাধ্যমে একজনকে মা শনাক্ত করেছেন। আমরা চাই টাকা ফিরে পেতে। আর অপরাধীদের বিচার।

এদিকে ৩-৪ দিন আগে সরকারি ভাতার টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আনজেরা বেগম নামে এক নারীর স্বর্ণ অলংকার ও টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। আনজেরার ছোট ভাই কালাম জানান, বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে তার বোনকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কথা বলে সরকারি ভাতার টাকা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে রিকশায় ওঠানো হয়।

এরপর ক্যাম্পাসে ঘুরিয়ে নানান কথা বলে কৌশলে স্বর্ণ অলংকার ও টাকা তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। স্বর্ণ অলংকার আর টাকা তিনি নিজেই দিয়েছেন, তবে যখন স্বাভাবিক হয়েছেন তখন কান্নাকাটি আর খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানিয়েছি।

একইভাবে বিমা থেকে টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১ এপ্রিল এক নারীর সঙ্গে থাকা অর্থ ও অলংকার লুটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ওই নারী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে যখন জানতে পারেন এটি বিমা অফিস নয় তখন তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কলেজের স্টাফরা জানান, ওই নারীকে এক আইনজীবীর ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপরই তিনি সবকিছু দুর্বৃত্তদের দিয়ে দিয়েছেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরে হঠাৎ করেই সম্মোহন করে লুটের ঘটনা ঘটছে। আর এ ঘটনার সব থেকে বেশি শিকার হচ্ছেন মধ্য বয়স্ক থেকে বয়স্ক নারীরা।

যদিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবশ্যই অবহিত করতে হবে। সেই সঙ্গে লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। আর এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম