বরিশাল শহর জুড়েই চলছে শব্দ দূষণ, অতিষ্ট নগরবাসী

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২২

মোঃ সজীব হাওলাদার, বরিশাল : বরিশাল শহর জুড়েই এখন চলছে শব্দ দূষণের প্রতিযোগিতা। সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দে জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আর এ শব্দ দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে । নীরব ঘাতক শব্দ দূষণের ফলে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী এবং অসুস্থ ব্যক্তিসহ সব বয়সী মানুষের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।

বরিশাল শহরে শব্দ দূষণ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। শব্দ দূষণের অন্যতম উৎসগুলো হচ্ছে, বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ন, নির্মাণ কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার, রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার, পটকা ফাটানোর উচ্চ শব্দ। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, পুরো দেশেই শব্দ দূষণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) ১৯৯৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, মানুষের জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের নির্দেশিকায় সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালাতেও একই মাত্রাকে সহনীয় মাত্রা হিসেবে ধরা হয়েছে

বরিশাল নগরীর স্কুল কলেজ কিংবা হাসপাতাল কোথাও শব্দ দূষণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। উচ্চ শব্দের হর্ন ব্যবহার করে চলছে অনেক যানবাহন। বিশেষ করে ছোট যানবাহন গুলো যেমন:- অটোরিকশা, অটো এবং মোটরসাইকেল এসব যানবাহনে উচ্চ শব্দের হর্ন ব্যবহার করা হয়।

কারণে-অকারনে, রাস্তায় গাড়ি থাকুক কিংবা ফাঁকা থাকুক চালক হর্ন বাজাতে থাকে একনাগারে বারে বারে। এই ধরনের উচ্চ শব্দের হর্ন বাজিয়ে শহরের শব্দ দূষণ করে চলেছে এধরনের যানবাহন। আর এই শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শরীরে অনেক ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের, বয়স্কদের, হাসপাতালের রোগীদের।‌

শিশু বয়সে শব্দের অধিক তারতম্যের জন্য বৃদ্ধ বয়সে তাদের কানের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় । দলগতভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে শব্দ দূষণের কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছে এবং দেখা গেছে- যে সমস্ত অঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেশি সেখানে নিম্নলিখিত অসুবিধা বা ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের মধ্যে পড়েছে।

মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, “নগরীতে শব্দ দূষণ বেড়েই চলছে, এতে আমরা অনেক সমস্যায় পরছি। আমরা এই শব্দ দূষণ থেকে মুক্তি চাই।

আরিফ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা রাস্তা দিয়ে যখন হেটে যাই তখন অথযা উচ্চ শব্দের হর্ণে আমাদের খুব সমস্যা হয়। অনেক সময় ছোট্ট বাচ্চারা খুবই ভয় পেয়ে থাকে।

সদর হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, অতিমাত্রায় হাইড্রোলিকর্ন ব্যবহার আর বিকট শব্দের কারণে মাথাব্যথা ও শ্রবনশক্তি লোপসহ বাড়ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা।

বরিশাল নগরীর ৪টি স্থানে পরীক্ষা করে অসহনীয় মাত্রায় শব্দ দূষণ পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। শব্দ দূষণ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসীর আর পরিবেশ অধিদপ্তরে পরিচালক মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, ‘শব্দ দূষণ একটি আইন আছে বাংলাদেশে, এই আইনটা মোবাইলকোর্টে তফসিলভূক্ত না হওয়ার কারনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারিনা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাইকে সভা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে তাদেরকে আমরা বোঝাতে পারি যে শব্দ দূষণ আমাদের শিশুদের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।

শব্দ দূষণের যে আইন আছে সেটি যাতে মোবাইল কোর্টে তফসিলভূক্ত করা হয় এটা সময় সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রকে জানাবেন বলেও জানায় পরিবেশ অধিদপ্তরে এই কর্মকর্তা।

বরিশাল নগরীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে জানবাহসনের চাপ, এর ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে ভয়াবহ শব্দদূষণে পরবে নগরবাসী। তাই দ্রুত কোন পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সুশীল সমাজ।