বরিশালে প্রতারক চক্রের ১ সদস্য আটক

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৭৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন বরিশাল নগরের এক বাসিন্দা। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের ছয় মাস পর পুলিশ চক্রের একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে।

গ্রেপ্তার মো. সোহাগ শেখ (২৪) শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের মো. জব্বার শেখের ছেলে।

রোববার (৭ জুলাই) বেলা ১১টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে তিনি জানান, গ্রেপ্তার সোহাগ শেখ প্রতারক চক্রের প্রথম স্তরের প্রথম ব্যক্তি। এখানে আরও চার থেকে পাঁচটি ধাপে ১০ থেকে ১২ কিংবা আরও বেশি সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বিদেশেও একটি স্তর থাকতে পারে। চক্রের সদস্যরা প্রতিটি স্তরে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ঘটনার বিবরণে উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, মামলার বাদী বরিশাল নগরের বাসিন্দা রত্নেশ্বর মাঝি (৬৫) একজন বেসরকারি অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। গত বছরের ১৯ নভেম্বর তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে খায়রুন নেছা নামে এক নারী কল করেন এবং কাস্টমস অফিসার হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।

এরপর ফোনের ওপার থেকে ওই নারী রত্নেশ্বর মাঝিকে জানান, যে তার (রত্নেশ্বর মাঝির) নামে এলিজাবেথ এরিস নামে একজন একটি লাগেজ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে বিপুল পরিমাণে ডলার আছে।

এরপর খায়রুন নেছা নামের ওই নারী রত্নেশ্বর মাঝিকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখান এবং ডলারগুলো কাস্টমস থেকে ছাড়ানোর জন্য পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা দাবি করেন।

পরে রত্নেশ্বর মাঝি মাত্র ২৩ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এবং বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে মোট ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান। এরপরও লাগেজ ছাড়াতে আরো টাকা লাগবে জানালে তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে কোতোয়ালি মডেল থানায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন।

কোতয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল ইসলামসহ একটি দল তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে থানার পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব মিস্ত্রি ও এস আই মো. রেজাউল ইসলামসহ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চৌকস সাইবার দল ঢাকার মতিঝিলে অভিযান চালায়।

অভিযানে সোহাগ শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে পাওয়া যায়, ৩৫টি ব্যাংকের ৮৬টি ডিজিটাল ব্যাংক (এটিএম) কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫১টি চেকের পাতা, একটি অ্যানড্রয়েডসহ চারটি মোবাইল সেট ও আটটি সিমকার্ড।

উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, এ চক্রের বাকি সদস্যের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। আর গ্রেপ্তার সোহাগ শেখের বিরুদ্ধে ঢাকার খিলগাঁও থানাসহ একাধিক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা মূলত বিদেশি নাগরিকের নামের ফেসবুক আইডি থেকে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। নানা পরিচয় দেওয়ার পর বলেন, ব্যবসা করার জন্য দেশে আসতে চান। আর তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশের টার্গেট ব্যক্তির কাছে কিছু উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণার মূল নাটক শুরু হয়।

উপহার পাঠিয়ে টার্গেট ব্যক্তির মেইল বা অন্য মাধ্যমে কিছু ডকুমেন্টস পাঠানো হয়, যা পরে বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির পাঠানো ডকুমেন্টসের সঙ্গে মিলে যায়। আর এর মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বাসটা অর্জনের চেষ্টা করেন চক্রের সদস্যরা।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাইরেও চক্রের সদস্য থাকতে পারে। তারা এত চালাক যে, টাকা পাঠানোর কয়েক মিনিটের মাথায় বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা তুলে নেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তির কাছে পাওয়া এটিএম কার্ডগুলোর ক্ষেত্রে যেসব পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো চক্রের কারও নয়। এখানেও জালিয়াতি করেছেন তারা।