
অনলাইন ডেস্ক : কুমিল্লার মুরাদনগরে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নারীকে তার বাবার বাড়িতে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় মামলার একমাত্র আসামি ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (২৯ জুন) ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একই উপজেলার বাহেরচর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে।
এর আগে শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রবিবার(২৯ জুন) সকালে এসব তথ্য জানান কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন।
ফজর আলী ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে মো. আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, ঘটনার রাতে তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় ফজর আলী ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীর স্বামী পাঁচ বছর ধরে প্রবাসে থাকার টাকা ধার নেয়ার সুবাদে ওই নারী ফজর আলী সঙ্গে পরকীয় জড়িয়ে পড়ে।
এ সম্পর্কের কথা টের পেয়ে ফজর আলীর আপন ছোট ভাই শাহপরানও তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন।
ঘটনার দিন রাতে বড় ভাই ফজর আলী তার ঘরে প্রবেশ করলে আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ছোট শাহপরানও লোকজন নিয়ে তার ঘরে ঢুকে ফজর আলী ও ওই নারীকে আটক করে মারধর করে ভিডিওধারণ করে।
এসময় ওই নারী চিৎকারে আশপাশের কয়েকজন লোক এসে ভুক্তভোগী নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পায়।
এরই ফাঁকে পরকীয়া প্রেমিক ফজর আলী পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনার ধারণকৃত ভিডিওটি তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। পরদিন ভুক্তভোগী ওই নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।
নারীকে নির্যাতনের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, ১০/১২ জন যুবক বিবস্ত্র অবস্থায় ওই নারীকে মারধর করছে। আর ওই নারী বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন।
কুমিল্লায় নারীর নগ্ন ভিডিওধারণ ও ভাইরালকাণ্ডে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ওই নারী জানায়, তার স্বামী বিদেশ থাকার সুবাদে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন ফজর আলীর কাছ থেকে। সেই থেকে ফজর আলীর সঙ্গে সম্পর্ক হয়। এটি তার ছোট ভাই শাহপরান জানতে পারে। তখন থেকে সে-ও তার সঙ্গে সম্পর্ক করতে চেষ্টা করে। এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়।
৪-৫ দিন আগে পাওনা টাকার জন্য ফজর আলী তার বাবা-মাকে চাপ দেয়। খবরটি শোনার পরে সে বাপের বাড়িতে আসেন ফজর আলী সঙ্গে কথা বলে।
ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে ফজর আলী ঘরে ঢুকলে আগ থেকে ওঁৎ পেতে থাকা তার ছোট ভাই শাহপরান লোকজন নিয়ে ঘরে ঢুকে গালাগাল করতে করতে মারধর করে।
এরই ফাঁকে কেউ একজন ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে। পরদিন তিনি থানায় মামলা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার মান-সম্মানতো চলেই গেছে। আর বিচার দিয়ে কি হবে।
আমি চাই না, আমার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আমি শান্তি চাই। আমি মামলা তুলে নেব।
এদিকে মামলার আসামি ফজর আলীসহ অন্যান্য আসামিরাও বিএনপির কেউ না বলে রবিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা বিএনপি। তারা স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলীকে অভিযুক্ত করে মামলা করলেও তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ওই নারী পুলিশকে বলেনি।
তবে ভিডিওধারণ ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় জড়িতদের শনাক্ত করে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রিমান্ডের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছেন।
শুনানি হলে বুঝা যাবে রিমান্ড দেবে কি না। আর পরকীয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। মামলার তদন্ত শেষে বুঝা যাবে প্রকৃতি ঘটনা।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ফজর আলীকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আর ভিডিও ছড়ানোয় জড়িত চারজনকে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব কথা আমার জানা নেই। আপনার সেখান থেকে জেনেছেন ওখানে গিয়ে প্রশ্ন করুন।
মামলা হয়েছে, তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে ঘটনার প্রকৃত কারণ জেনে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান হবে। এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সূত্র : দেশ রূপান্তর