সারাদেশের মতো বরিশালেও বেড়েছে ডাবের দাম

News News

Desk

প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩
ছবি : শহিদুল ইসলাম সুজন

অনলাইন ডেস্ক : খালি ডাবের দাম বাড়ছে এইডা দেহেন, বাজারে কোন জিনিসটার দাম বাড়ে নাই। আগে ডাব কিনছি কম দামে, বেচছিও কম দামে। এহন কেনা বেশি তাই বেচাও লাগে বেশি দামে। এতো আমরা বানাই না, কিইন্না আনি। আগে গাছসহ কিনতাম, এহন গাছ মালিকও গুইন্না গুইন্না বেঁচে। এহন একটা ডাব খরচাসহ ৮০/১১০ টাহার ওপরে কেনা পড়ে। তাইলে বেচমু কত’।

আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) সামনে থাক ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা সবুর হাওলাদার।

তবে ক্রেতারা বলছেন ভোগান্তির কথা। সারাদেশের মতো বরিশালেও বেড়েছে ডাবের দাম। আকার ভেদে প্রতিপিস ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা দরে। তবে সবচেয়ে বেশি দামে ডাব বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের পাশের দোকানগুলোতে। রোগীর স্বজনরা অনেকটা বাধ্য হয়েই বেশি দাম কিনে নিচ্ছে ডাব।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেরে ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি বরগুনার জাহিদ হোসেনের স্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক জোরাজুরি করে দুটি ডাব ৩২০ টাকা দিয়ে কিনেছি। তিন-চারজন ডাব বিক্রেতার কাছে ঘুরে একজনের কাছ থেকে নিলাম। সবার কাছে একই দাম। ডাবের সাইজ ভেদে ১০/২০ টাকা কম বেশি, কিন্তু হাসপাতাল চত্বরে ১২০, ১৪০, ১৬০ টাকার নিচে কোনো ডাব নেই।

চিকিৎসা নিতে আসা ঝালকাঠির হামিদুর রহমান বলেন, স্ত্রীর রক্ত শূন্যতা, তাই এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় রক্ত দিতে এসেছেন। ঐ ডোনারের জন্য শেবাচিমের মাঝের গেটের সামনে থেকে একটি ডাব কিনেছি ১৬০ টাকা দিয়ে।

তিনি আরও বলেন, গত একমাস আগেও ডাবের এতো দাম ছিল না। হঠাৎ করে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে ডাব বিক্রি করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।

জামাল ফকির নামের এক ডাব বিক্রেতা বলেন, বাবুগঞ্জ, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ডাব পাইকারি আনি। গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচাসহ একেকটি ডাব ১০০ টাকার বেশি পড়ে। নেই ডাব ১৪০, ১৬০ টাকায় না বেচলে খামু কি।

সারাদিনে ৪-৫ ছড়া ডাব বেচি, ডাব প্রতি ২০-৩০ টাকা থাকে। তবে হাসপাতালে দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ডাবের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। ডাব কিনতে গেলেই ১৩০-১৬০ টাকা প্রতি পিস। নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান সদর রোড বিবির পুকুর পাড়ে গিয়েও দেখা যায় একই অবস্থা। সেখানেও দুই-তিনজন ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা ১৫০ টাকা করে ডাব বিক্রি করছে। নগরীর নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড, রুপাতলী বাস স্ট্যান্ড, লঞ্চ ঘাট ও আদালত চত্বরের সামনে ১৫০ টাকা করে প্রতি পিস ডাব বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর বিবির পুকুর পাড়ে ডাব খেতে আসা সাউথ ইস্ট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এইতো কিছুদিন আগেও ৫০ টাকা করে ডাব খেয়েছি। মাসের ব্যবধানে তা ১৫০ টাকায় খেতে হচ্ছে। আসলে আমাদের দেশে কোনো কিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যেখান থেকে পারছে ইচ্ছে মত সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছে। আর এর ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ জনগণ।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল কর্মকর্তা (মেডিসিন বহির্বিভাগ) ডা. তিলোত্তমা শাহরীন বলেন, ডেঙ্গুর জন্য শুধু ডাব নয়, যেকোনো তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বরে খাবার স্যালাইন, লেবুর পানি, চিড়ার পানি। রোগীর শরীরে ঘাটতি পূরণে বা প্লাজমা লিকেজ হচ্ছে সেজন্য যেকোনো তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রাণী দাস বলেন, ডাবের দাম অস্বাভাবিকভাবে আদায় করা হচ্ছে এমন খবরে এরই মধ্যে আমরা নজরদারি শুরু করেছি।

যেহেতু ডাবের কোনো নির্ধারিত বাজার নেই। এজন্য বিভিন্ন স্পটের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কেউই ক্রয় রসিদ দেখাতে পারেননি। বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপর না শুনলে জরিমানা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিক্রেতাদের যতই যুক্তি থাকুক একটি ডাবের দাম ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা হওয়াটা অস্বাভাবিক। কারণ বিক্রেতারা ডাবগুলো বরিশালের আশপাশের গ্রাম থেকেই কিনে আনেন।

সূত্র: বিডিক্রাইম