ধাক্কা দিল আর আ.লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয় : প্রধানমন্ত্রী

News News

Desk

প্রকাশিত: ৯:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়, কেননা দলটি জনগণের জন্য কাজ করে।

সরকার পতনের চেষ্টার অংশ হিসেবে বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিএনপি-জামায়াত চক্রের দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সাথে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান- সব এক জায়গায় হয়ে ক্ষমতা থেকে নাকি আমাদের উৎখাত করবে।

তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমি বলে দিতে চাই যে, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয়।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি’র উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার যারা জনগণ দ্বারা বিতাড়িত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা আবার গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে ? তাদের নিজেদের মধ্যেই তো গণতন্ত্র নেই।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন, একটি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, আর একটি ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে দেশে-বিদেশে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে সারাদিন আমাদের বিরূদ্ধে কুৎসা রটায়, আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে খুব একটা আতংক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাক ঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে।

তিনি বলেন, ‘তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ঠেকাতে পারে আওয়ামী লীগ। কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতার থেকে হঠাতে আওয়ামী লীগই পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা আমরা নিজের দলে যেমন করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি। আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম- এই সবই তো আমরা চালু করেছি, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যেটা রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন।

তিনি আরও বলেন, এটা সকলের মনে রাখা উচিত যে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উঠায় না, প্রশ্ন উঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয়- ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কয়টা আসন পেয়েছিল? ৩শ’ আসনের মধ্যে ২৯টি, আর উপনির্বাচনে একটি মিলিয়ে ৩০টি আসন। ঐ নির্বাচন নিয়েতো কোনো প্রশ্ন নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে, জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাল্লাহ অব্যাহত থাকবে।

জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেন এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শক্রুর বন্দিখানা থেকে এই দেশের মাটিতে ফিরে আসেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট হত্যা করা হলেও তার দেওয়া নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী, আমরা রাষ্ট্রপরিচালনা করে আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। পিতার কাছে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন- কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আরাফাত ও অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম,

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন।

প্রসঙ্গত, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ সেনাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার পর, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও নয়াদিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে ফিরে আসেন। সেই থেকে দিনটিকে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করছে জাতি।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের কাছে যে ওয়াদা দেয় সেই ওয়াদা রাখে। কেননা ২০০৮ এর নির্বাচনি ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল সে অনুযায়ী দেশকে তারা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে পেরেছে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে জাতি যখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জযন্তী উদযাপন করছে তখনই বাংলাদেশ এই উন্নয়নশীল দেশে স্নাতক হবার গৌরব অর্জন করে।

আজকে তার সরকার প্রতিটি ভূমিহীনকে বিনামুল্যে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করেছে। শতভাগ ছেলে-মেয়ে আজকে স্কুলে যাচ্ছে পড়াশোনা সম্পর্কে সবার মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল সেন্টার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা এবং মোবাইলসহ আধুনিক প্রযুক্তি জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসে আমরা তা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি, বলেন তিনি।

সরকার প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া পাওয়া ছেলে-মেয়েরা ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থাটা চিন্তাই করতে পারবে না। তবে, তাদের জানা উচিত এটার জন্য আওয়ামী লীগ ওয়াদা দিয়েছিল। আর তা পূরণও করেছে।

আজকে তথ্য-প্রযুক্তি এবং যেগাযোগ ব্যবস্থাসহ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া সরকার ২৯ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তারা কেন পারেনি দেশকে উন্নত করতে। আজকে যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনও করে কিন্তু তাদের জন্ম গণতন্ত্র থেকে হয়নি। হয়েছে ক্ষমতা দখলকারী, সংবিধান লঙ্ঘনকারী মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করা হয়েছিল এরা সেই দল। এরা তো ভাসমান কাজেই এদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে। সে জন্যই তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করতে পারে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায় এবং দেশকে তার সরকারের রেখে যাওয়া খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ থেকে আবারো খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০০ সালে যেদিন আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে ঘোষণা দিয়েছিল ‘আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে’ তখন বিরোধী দলে থাকা বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা ভাল নয় তাহলে বিদেশি সাহায্য, ভিক্ষা পাওয়া যাবে না। তার মানে তাদের নীতিটাই ছিল বৈদেশিক নির্ভরশীলতা, বিদেশের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে চলা।

তিনি সে সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কি সারাজীবন ভিক্ষা করেই চলবে? আওয়ামী লীগ ওয়াদা করেছিল দেশের উন্নতি করবে, আমরা সেসব ওয়াদাই রেখেছি এবং মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সুন্দরভাবে করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সে সময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনের পাশাপাশি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিল, সাক্ষরতার হার বাড়ানোর পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিক করে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। আর এর মাধ্যমে মানুষের সেবা করাটাই যে সরকারের দায়িত্ব প্রথম মানুষ তা অনুধাবন করতে সমর্থ হয়। কিন্তু আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ আওয়ামী লীগ সরকারে থাকতে না পারায় বাঙালির জীবনে আর একটি কালো অধ্যায় নেমে আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করলেও তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। তার সেই শূন্যতায় দেশের স্বাধীনতা তখন অধরা ছিল। ১০ জানুয়ারি যখন বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, তখন যেন আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণ হল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী দেশে দেশে ধরণা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের চাপেই পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আগে জনগণের কাছে যান। পরিবারের কাছে পরে গিয়েছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছি বাবার কাছ থেকে। দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়াই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। যখনই সুযোগ পেয়েছেন বাঙালির জন্য কিছু করে গেছেন। তার খুব আশা ছিল এ দেশকে গড়ে তুলবেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে ফিরেই জাতির পিতা দেশ গঠনের রূপরেখা দিয়েছিলেন। এই ঘুণে ধরা সমাজ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও আধা ঔপনিবেশিক শক্তি তথা পাকিস্তানের মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাত গড়ে ওঠা যে শাসন ব্যবস্থা সেগুলো ভেঙে দিয়ে তৃণমূলের মানুষকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাতি। না হলে বাংলাদেশ আরও অনেক আগেই উন্নত হতে পারত।

সূত্র : দেশ রূপান্তর