দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২০০, ডিমেও রেকর্ড News News Desk প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২২ অনলাইন ডেস্ক : জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ। বিগত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এ মুরগির দাম ২০০ টাকা ছুঁয়েছে। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের দাম রেকর্ড মূল্যে ১৪৫-১৫০ টাকায় উঠেছে। শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালী, নিকেতন কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২০০ টাকা। তবে কোনো কোনো ব্যবসায়ী ১৯০-১৯৫ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করছেন। যেখানে গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেটি কেজি প্রতি প্রায় ৪০ টাকা বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা। যা বলছেন বিক্রেতারা জানতে চাইলে নিকেতন বাজার এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, পাইকারি দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে। আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা কি করব ভাই, তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচও বেড়েছে। নিরুপায় হয়েই দাম বাড়িয়েছি। এদিকে, ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। এ জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। মুরগির দামের বিষয়ে মহাখালী কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মামুন বলেন, দাম বাড়ার মূল কারণ মুরগির খাদ্যের দাম বাড়তি। পাশাপাশি খামারিদের উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন খরচও বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই ব্রয়লার মুরগির দাম ২৫০-৩০০ টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে। ডিমের দামে রেকর্ড বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আর মুদি দোকানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা দরে। যেখানে মাত্র এক সপ্তাহ আগে ডিমের ডজন ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নিকেতন গাছতলা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মো. আবদুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিনে মুরগির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। মুরগির দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে ডিমে। দাম আরও বাড়তে পারে। একই বাজারের মো. আবুল কাশেম বলেন, গত সপ্তাহে এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি করেছি। তেলের দাম বাড়ানোর পর গত কয়েকদিন হঠাৎ ডিমের দাম বেড়ে গেছে। আজ এক ডজন ডিম ১৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আমি অনেক দিন ধরে ডিমের ব্যবসা করছি। এর আগে কখনো ডিম এতো দামে বিক্রি করতে হয়নি। শুধু ব্রয়লার বা ডিম নয় পাশাপাশি সব ধরনের শাক-সবজি এবং মাছের দাম লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে। কাঁচামরিচের দাম ইতোমধ্যে ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছে। ক্রেতাসাধারণের প্রতিক্রিয়া মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুনুর রশিদ নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়ছে। সামান্য টাকায় চাকরি করি। বেতন তো বাড়ে না। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাজারে এলাম মুরগি কিনব। না পেরে ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছি। এখন ডিমের যে দাম কয়দিন পর ঘাস-লতাপাতা খেতে হবে। মো. সোলাইমান নামের এক শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় মেসে থেকে পড়াশুনা করি। আপনি তো জানেন, ব্যাচেলরদের রান্না মানেই ডিম, মুরগি। মাছ কম খাই, দাম বেশি বলে। এখন এ দুটোরই দাম বেড়েছে। জানিনা ঢাকায় টিকে থাকতে পারব কিনা। যা বলছেন অর্থনীতিবিদ বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে কথা হয় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে একটি প্রশ্ন থাকছে- যে হারে জ্বালানির মূল্য বেড়েছে তার সমানুপাতিক হারে নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে কিনা। বা সরবরাহ ঠিকঠাক আছে কিনা। যদি না হয় সেক্ষেত্রে বাজারে মনিটরিং বাড়ানো উচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানির যে মূল্য বেড়েছে তার তো কিছুটা প্রভাব রয়েছেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে করণীয় কি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আরবান রেশনিং, সোশ্যাল সেফটিনেস এবং ওপেন সেলস মার্কেট- এই তিনটি উপায়ে পণ্য যদি পৌঁছানো যায় তাহলে অন্তত নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের উপর চাপটা কমবে৷ আরেকটি বিষয় হচ্ছে- একজন রিকশাওয়ালা চাইলেই তার রিকশা ভাড়া বাড়িয়ে নিতে পারছেন, কিন্তু একজন চাকরিজীবী চাইলেই তার বেতন বাড়াতে পারছেন না। কাজেই, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে স্যোশাল সেফটিনেস-এর আওতায় সুবিধাভোগী ৬৫ লাখ থেকে ১ কোটিতে বাড়িয়েছে। এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এখন এই কার্যক্রমের স্থায়ীত্ব, প্রাপ্তি এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম SHARES অর্থনৈতিক বিষয়: