রাজধানীর গুলিস্তানেই তৈরি হয় চীন, ভিয়েতনাম ও ফিনল্যান্ডের ফোন! News News Desk প্রকাশিত: ১০:১১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২২ অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর গুলিস্তানেই তৈরি হতো নকল মোবাইল ফোন। গায়ে লেখা হতো মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাম। শুধু তাই নয় পরিবর্তন করা হতো চোরাই দামি ফোনের ‘আইএমইআই’ (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নাম্বার। সরকারি সংস্থার কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকলেও দিনে ৫০টি মোবাইল ফোন তৈরি হতো এ কারখানায়। দিনে ২০০টিরও বেশি মোবাইল বিক্রি করতেন কারখানার মালিক মো. স্বপন (২৬)। বিভিন্নভাবে মোবাইলের যন্ত্রাংশ এনে তার কারখানায় নকল আইএমআই দেয়া হতো। সবশেষ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহক ও অপরাধীদের হাতে তা চলে যেতো। এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। গত রবিবার রাতে তার কারখানা থেকেই স্বপনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩ এর একটি দল। সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) সহযোগিতায় র্যাবের অভিযানে প্রায় এক হাজার ৫০০টি মোবাইলফোন, তিন হাজার ৩৭০টি নকল ব্যাটারি, ১২০টি হেডফোন, চার্জার ক্যাবল ৩৮৫টি, নকল চার্জার এক হাজার ১৫৫টি, সেলার মেশিন, হিট গান, মোবাইলফোনের ডিসপ্লে ৪৩টি, ইলেকট্রিক সেন্সর ১০টি, আইএমইআই কাটার মেশিন ১৩টি। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড জব্দ করা হয়। আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, একটি বেসরকারি অফিসের পিয়নের কাজ করা স্বপনের ছোট বেলা থেকেই প্রযুক্তিগত দিকে আগ্রহ ছিল। একজনের মোবাইল ফোন মেরামতের সূত্রে গুলিস্তান এলাকার এক মেকানিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সেই মেকানিকের মাধ্যমে স্বপন জানতে পারেন মোবাইল ফোন মেরামতের ব্যবসাটি লাভজনক। তখন তিনি বিনা বেতনে একটি সার্ভিসিং দোকানের মেকানিকের সঙ্গে কাজ শিখতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে স্বপন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওপর বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে জানার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখেন। একপর্যায়ে স্বপন নিজেই ভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মোবাইল ফোন তৈরি ও ‘আইএমইআই’ নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করে। র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, স্বপন প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল তৈরি করতে পারেন। তার কারখানায় আরও কয়েজকজন সহযোগী ছিল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। স্বপনের কারখানায় তৈরি করা এ মোবাইল দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিতেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব মোবাইল বিটিআরসির ডাটাবেজে নিবন্ধিত না থাকায় মোবাইলগুলো বিক্রির পর অধিকাংশ মোবাইল ফোনেই কোনো না কোনো সমস্যার কারণে গ্রাহক অভিযোগ করতেন। বারবার মোবাইল নষ্ট হওয়ায় গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হতেন। তখন মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি আর ফেরত নিতে আসতেন না গ্রাহকরা। তখন ওইগুলো মোবাইল পুনরায় মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতেন তিনি। র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরো বলেন, স্বপনের কারখানায় তৈরি ১০ হাজার মোবাইল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়েছে। এই মোবাইল বিক্রির ৩০ লাখ টাকারও বেশি দিয়ে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন স্বপন। এসব নকল মোবাইল দিয়ে কথা বলা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করা যেত। মোবাইল কোনো অপরাধ চক্র অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা জানতে তদন্ত করছে র্যাব। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন SHARES আইন আদালত বিষয়: