কে এই স্টর্মি ড্যানিয়েলস, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তার কী ঘটেছিল?

News News

Desk

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করার অভিযোগে করা মামলায় বিচার চলছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যার ফৌজদারি অপরাধের কারণে বিচার হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি অর্থ দেওয়ার বিষয় নিয়ে মিথ্যা বলছে।

মিজ ড্যানিয়েলস দাবি করেন যে তার ও ট্রাম্পের মাঝে যৌন সম্পর্ক হয়েছিলো। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবীর মাধ্যমে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিলো তাকে এবং তিনি সেটা গ্রহণও করেছিলেন।

ট্রাম্পের সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে পরে একাধিক অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়। এই অভিযোগটি প্রথম প্রকাশ হয় ২০১৮ সালে এবং শুরু থেকেই এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিজ ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি বারবার অস্বীকার করে আসছেন।
স্টর্মি ড্যানিয়েলস কে?
৪৫ বছর বয়সী মিজ ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানাতে। তিনি পেশায় একজন পর্ন তারকা ও পরিচালক। তিনি তার কাজের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও জিতেছেন। এছাড়াও, তিনি মূলধারার হলিউড চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কমেডি সিনেমা ‘দ্য ফর্টি-ইয়ার ওল্ড ভার্জিন এ্যান্ড নকড আপ’।

তিনি রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তিনি নিজেকে রিপাবলিকান হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। রিপাবলিকান পার্টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও একজন রিপাবলিকান। তিনি ২০১৬ সালের এই দল থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।

ড্যানিয়েলসের ‘যৌন সম্পর্কের’ দাবি
মিজ ড্যানিয়েলস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে একটি দাতব্য গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছিলেন তিনি। তিনি দাবি করেন যে তারা ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার রিসোর্ট এলাকার লেক টাহোতে অবস্থিত ট্রাম্পের হোটেলের একটি কক্ষে একবার যৌন সম্পর্কে জড়ান তারা।

তবে সেই সময় ট্রাম্পের আইনজীবী এই দাবিকে “তীব্রভাবে” অস্বীকার করেন। “তাকে (ট্রাম্প) এটা নিয়ে চিন্তিত মনে হয়নি। তাকে অনেকটা উদ্ধত দেখাচ্ছিলো,” ট্রাম্প তাকে সেই ঘটনার বিষয়ে চুপ থাকতে বলেছিলেন কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মিজ ড্যানিয়েলস। ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প সেই গলফ টুর্নামেন্টে উপস্থিত ছিলেন না এবং তিনি তখন সবেমাত্র সন্তান প্রসব করেছেন।

মুখ বন্ধ রাখতে ‘হুমকি ও ঘুষ’
মিজ ড্যানিয়েলস বলেন, এই সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্পের আইনজীবী কোহেন ২০১৬ সালের নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। সেবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, তিনি সেই ঘুষ নিয়েছিলেন কারণ তিনি তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। মিজ ড্যানিয়েলস বলেন, চুপ থাকার জন্য তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় ও শারীরিকভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছিলো।

২০১৮ সালে মিজ ড্যানিয়েলস এক সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন যে তখন থেকে ঠিক সাত বছর আগে লাস ভেগাসের একটি পার্কিং লটে কীভাবে একজন অপরিচিত লোক এসে তাকে ও তার শিশু কন্যাকে ভয় দেখিয়েছিলো এবং “ট্রাম্পকে ছেড়ে চলে যান” বলেছিলো।

তিনি বলেন যে ২০১১ সালে টাচ ম্যাগাজিনকে ওই সম্পর্কের বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই তাকে হুমকি দেওয়া হয়।

সিবিএস-এর ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে ওই অপরিচিত ব্যক্তির হুমকির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “খুব সুন্দর ছোট্ট একটি মেয়ে আমার। যদি তার মায়ের কিছু হয়ে যায়, তবে সেটি বেশ লজ্জার হতে পারে।”

সিবিএস-এর ওই পর্বটি সম্প্রচারের আগে কোহেনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি শেল কোম্পানি মিজ ড্যানিয়েলসকে ২০ মিলিয়ন ডলারের মামলার হুমকি দেয়। মিজ ড্যানিয়েলসকে ওই কোম্পানি জানায়, তিনি তাদের তথ্য গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।

মিজ ড্যানিয়েলস সিবিএস-এর অনুষ্ঠানে বলেন যে তিনি ওই চুক্তি ভেঙ্গে জাতীয় টেলিভিশনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলায় ১০ লাখ ডলার জরিমানার ঝুঁকিতে ছিলেন, কিন্তু “নিজেকে রক্ষা করার মতো সামর্থ্য অর্জন করাটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল,” বলেন তিনি।

ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক বিষয়ক স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার তখন ছাপতে পারেনি ইন টাচ ম্যাগাজিন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তারা সেটি প্রকাশ করে।

সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার তিন মাস পর সিবিএস নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন মিজ ড্যানিয়েলস।

ঘুষ দেওয়া কি বেআইনি?
নন-ডিসক্লোজার বা এনডিএ (অপ্রকাশিত চুক্তি) চুক্তির বিনিময়ে কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া বেআইনি না। কিন্তু ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট থেকে কীভাবে কোহেনকে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিলো, আইনজীবীরা সেদিকে বেশি আলোকপাত করেছেন। কোহেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে তিনি এই লেনদেনকে তার আইনি পরামর্শের ফি বলে দাবি করেছেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে অর্থের লেনদেন করা হয়েছিল। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ অভিযোগ করেছেন যে “ ট্রাম্প জনগণের কাছ থেকে তার অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন।”

২০১৮ সালের আগস্টে কর ফাঁকি, মিজ ড্যানিয়েলস ও অন্য প্রেমিকাদের অর্থ দেওয়ার মতো নির্বাচনি আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত দোষ স্বীকার করে নেওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

যদিও প্রাথমিকভাবে তিনি বলেছিলেন যে অর্থ লেনদেনের সঙ্গে ট্রাম্পের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরবর্তীতে কোহেন সাক্ষ্য দেন যে ট্রাম্পের নির্দেশে নিজের তহবিল থেকে মিজ ড্যানিয়েলসকে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প পরে তাকে তা ফেরত দেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কী বলছেন?
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ম্যানহাটনের ফৌজদারী আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ ৩৪ ধরনের অপরাধের অভিযোগ আনা হলে তিনি সবগুলোই অস্বীকার করেছেন। মিজ ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের ব্যাপারে তার সংশ্লিষ্টতা আছে বলে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেইসাথে, একজন সাবেক প্লেবয় মডেলের সাথে তার (ট্রাম্প) কথিত যৌন মিলনের বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য সেই মডেলকেও অর্থ প্রদানের বিষয়টিও এখন তদন্তাধীন।

এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি আবারও এই মামলার বিচারকার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছেন যে এটি ডেমোক্র্যাট পরিচালিত একটি ‘উইচ হান্ট’।

কেন এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা, এমনকি ডানপন্থী ধর্মীয় ঘরানার মানুষও তার পূর্বের আচরণ ও তার বিরুদ্ধে থাকা নারীদের অভিযোগকে অনেকাংশে খাটো করে দেখছে। কিন্তু ম্যানহাটনের এই মামলাটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা এই নির্বাচনি বছরেই শোনা যাচ্ছে এবং এটি আগামী ছয় সপ্তাহ ধরে চলবে। সেক্ষেত্রে, এই বিচার প্রক্রিয়ার কারণে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচনি প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে দিনের বেলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার এবং রাতে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একজন ফৌজদারি মামলার আসামি হিসাবে, আইনি বিধি মোতাবেক তাকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। আদালতে অনুপস্থিতির জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার হুমকি দিয়েছেন বিচারপতি জুয়ান মার্চান। সেক্ষেত্রে এটি তার নির্বাচনি প্রচারকে জটিল করে তুলবে।

বিবিসি’র উত্তর আমেরিকার সংবাদদাতা অ্যান্থনি জার্চার বলেছেন, এই মামলায় যদি তিনি দোষীও প্রমাণিত হন, তাহলে তা তাকে নির্বাচনি প্রচার চালানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা দিবে না।

প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন আইনে এমন কিছু নেই যা একজন দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রার্থীকে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে দিবে। কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এমনকি, তিনি জেলে থাকলেও ভোটে জিতলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন।

 

 

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন