বরিশালে ডাকাত সন্দেহে জনতার হাতে অবরুদ্ধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১৫ সদস্য

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : গভীর রাতে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে ডাকাত সন্দেহে জনতার হাতে অবরুদ্ধ হয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বরিশালের সদস্যরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

শনিবার (০৬ এপ্রিল) রাতে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার উপজেলার বাগধা বাজারে।

স্থানীয়দের দাবি, শুরুতে তারা নিজেদের পরিচয়ের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে না পারায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। যেখানে বরিশাল জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১৫ জন সদস্যসহ মোট ১৮ জন ছিলেন।

জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ (প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কেজি) গাঁজা জাতীয় মাদকদ্রব্য বেচাকেনা হবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সন্ধ্যা নদী ধরে বরিশালের আগৈলঝাড়ার পয়সার হাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা। এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১৫ সদস্যকে বহন করা দুটি স্পিডবোটে দুজন চালক ও একজন সংবাদকর্মীসহ ১৮ জন ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, স্পিডবোট দুটি আগৈলঝাড়া যাওয়ার সময় উজিরপুর উপজেলার সাতলা বাজারসহ নদীপথে বিভিন্ন এলাকা হয়ে যাচ্ছিল। তখন বিভিন্ন জায়গার মসজিদের মাইকে ডাকাত সন্দেহে মাইকিং শুরু হয়। পথে স্পিডবোট দুটি আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা বাজারের কাছাকাছি স্থানে কচুরিপানায় আটকে যায়।

পরে অধিদপ্তরের কয়েকজন সদস্য স্পিডবোট থেকে বাগধা বাজারে যান এবং বাকিরা পয়সারহাট লঞ্চঘাট এলাকায় মাদক উদ্ধারে চলে যান। কিন্তু সেখানে কোনো মাদক না পেয়ে বাগধা বাজারে ফিরে আসেন তারা।

আর ওই সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন, উপ-পরিদর্শক ইশতিয়াক হোসেন, মু. আব্দুল মজিদ, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. ফারুক হোসেন, দিপঙ্কর মণ্ডল, সিপাই মো. হানিফ, মো. ফয়েজ, মো. সাইফুল রহমান, অফিস সহায়ক মো. জাহিদ, মো. বেল্লালসহ তাদের ১৫ জন সদস্য, দুইজন স্পিডবোটচালক ও একজন সংবাদকর্মীসহ মোট ১৮ জনকে স্থানীয় জনগণ ডাকাত সন্দেহে অবরুদ্ধ করে রাখে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন জানান, গভীর রাতে মসজিদের মাইকে মাইকিং করার কারণে আতঙ্কিত জনগণ সবাই ঘরের বাইরে অবস্থান নিয়ে পাহারায় নেমে যায়। ওই লোকদের দেখে সন্দেহ হলে এলাকার লোকজন মিলে তাদের ঘিরে ফেলে। অবরুদ্ধ হয়ে তারা প্রথমে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিলে সবাইকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়। তবে তাদের সবার কাছে পরিচয়পত্র না থাকায় বিষয়টি নিয়ে আরও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। যে কারণে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ বাজার কমিটির লোকজনকে খবর দেয় স্থানীয়রা।

জহির নামে একজন জানান, এ ঘটনায় ওই রাতে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

আগৈলঝাড়া বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি জানান, ডাকাত সন্দেহে আটক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা জানিয়েছেন মাদক বেচাকেনার গোপন সংবাদটি পেয়েই দ্রুত পৌঁছাতে নদীপথে তারা অভিযানে চলে আসেন। এ কারণে স্থানীয়দের সঙ্গে কিছুটা বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, বিগত দিনেও ওই এলাকায় নদীপথে স্পিডবোট নিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটায় মানুষের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর সেখানে থেকেই রাতে ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন জানান, কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি থেকেই তিনিসহ অভিযানিক দলের সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের বিপত্তি দেখা দেয়। এ কারণে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হলেও পুলিশ গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তারা অভিযান শেষে চলে এসেছেন।

তবে অভিযানে গিয়ে কিছু উদ্ধার হয়নি জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা সেখানে যাওয়ার আগে ঢাকার ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি গ্রুপ মাদকগুলো নিয়ে গেছে। আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের এসআই নূরে আলমসহ আমরা সেখানে গিয়ে নাইটগার্ডের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি- ট্রলারে থাকা কিছু বস্তা ভ্যানে ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

যদিও ডিবি পুলিশের অভিযানের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে পারেনি থানা পুলিশ। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলম চাঁদ জানান, গ্রামবাসীর কাছ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে তাদেরকে যেতে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম