বিসিসি’র আড়াই কোটি টাকার প্রকল্প, দুই মাসও সুবিধা পায়নি নগরবাসী

News News

Desk

প্রকাশিত: ৬:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
ছবি : সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়

অনলাইন ডেস্ক : নাগরিকদের নিরাপত্তায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) উদ্যোগে আড়াই কোটি টাকা খরচ করে স্থাপন করা হয়েছিল ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। তবে দুই মাসও এর সুবিধা পায়নি নগরবাসী। এরই মধ্যে কেটে গেছে পাঁচ বছর, বদল হয়েছে মেয়র, কিন্তু জনগণের টাকায় কেনা সেই ক্যামেরা আর চালু করা হয়নি।

ফলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার অধিকাংশ ডিভাইস বিকল হয়ে পড়ে আছে। চুরি হয়ে গেছে সংযোগ ক্যাবল। নতুন বরাদ্দ এলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা আবারও চালু করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।

সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর উদ্যোগে ২০১৯ সালের ১৬ মে চীনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঘোষণা দিয়েছিলেন নগরীর প্রতিটি লাইটপোস্টে অত্যাধুনিক এলইডি লাইট স্থাপন করা হবে। যার সঙ্গে উন্নতমানের চেহারা শনাক্তকারী হাই রেজুলেশনের সিসি ক্যামেরা, মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম যুক্ত থাকবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তিতে এ সকল ডিভাইস নিয়ন্ত্রিত হবে। কিন্তু সেই ঘোষণাও আর বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নগরীর গরুত্বপূর্ণ সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেন প্রয়াত মেয়র আহসান হাবিব কামাল। ৩০টি ওয়ার্ডে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৬১টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরা তদারকির জন্য ৮টি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করে বিসিসি। কাজ শেষ হলে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল তৎকালীন মেয়র আহসান হাবিব কামাল সিসি ক্যামেরার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

তবে জুন মাসের মধ্যে এসব ক্যামেরার কমপক্ষে ২০০টির সংযোগ ক্যাবল চুরি হয়ে যায়। অনেকগুলো ক্যামেরায় ত্রুটি দেখা দেয়, বিকল হয়ে পড়ে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিকল হয়ে পড়ে আছে ক্যামেরাগুলো।

নগর ভবনের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ওই সময়ে মেট্রোপলিটন পুলিশও চাচ্ছিল না সিটি কর্পোরেশনে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা চালু করুক। এতে করে নগর কর্তৃপক্ষ পুলিশের গতিবিধি নজরদারি করতে পারবে।

যদিও এমন দাবির পক্ষের কোনো বক্তব্য মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

নগর কর্তৃপক্ষের সিসি ক্যামেরা প্রকল্প কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, সিসি ক্যামেরাগুলো চালু করার জন্য নতুন করে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে সবগুলো ক্যামেরাই চালু করা সম্ভব। বর্তমানে ক্যামেরাগুলো বিকল অবস্থায় পড়ে আছে।

তিনি বলেন, আমাদের স্থাপিত ক্যামেরার সংখ্যা ২৬১টি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কতগুলো ক্যামেরা স্থাপন করেছে তা আমাদের জানা নেই।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা নগরবাসীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ক্যামেরাগুলোর ক্যাবল চুরি হয়ে গের। জনগণের টাকায় ক্রয় করা এসব ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়ে রইলো।

অথচ এর কোনো জবাবদিহিতা হলো না। এটা নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা। আমি মনে করি, নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিসি ক্যামেরার বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। পাশাপাশি নগরবাসীর নিরাপত্তায় ক্যামেলাগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেবেন।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের সিসি ক্যামেরা বিকল থাকায় কমপক্ষে ৩০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের যে ক্যামেরাগুলো চালু করা সম্ভব সেগুলোকে আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য আমি প্রস্তাব দিয়েছি। তাদের ক্যামেরাগুলো বিএমপির সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। ইতোমধ্যে সম্ভবত কিছু যুক্ত হয়েছে। তবে সবগুলো যুক্ত করতে পারিনি।

সুত্র : ঢাকা পোস্ট