সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল পেতে শুরু করেছে জনগণ : প্রধানমন্ত্রী

News News

Desk

প্রকাশিত: ১১:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ দাবি করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চুলায় রান্না হয়।

‘আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এই সেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি।

কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।

বঙ্গবন্ধুকে হত‌্যার পর দেশের যে উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকা থেমে গিয়েছিল, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার তা পুনর্গঠনে হাত দেয়, জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময়ে প্রতিটি খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেই।

দীর্ঘদিনের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করি। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার শুরু করি।

কিন্তু, ২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামাতে সরকারের ওই ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হত্যা-গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো এবং জঙ্গিবাদের লালন-পালনসহ অপশাসন-কুশাসনে জোট সরকার যে মাইলফলক স্থাপন করেছিল, এ দেশের মানুষ আগে কখনও তা দেখেনি। শুধু আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় ওই সময়। অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস, সাক্ষরতা হ্রাস জনজীবন দুর্বিসহ করে তোলে।’

১৬ বছর আগে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে তুলনায় বর্তমানের দেশের পরিস্থিতি কেমন তা কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে (২০০৫-০৬) বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।

বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৬০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বিএনপি-জামাতের শেষ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে আয় হয়েছিল ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।’

শেখ হাসিনা জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আছে।

২০০৫-০৬ সময়ে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২ জনে। গড় আয়ু সাড়ে ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৭১ শতাংশ, তা হয়েছে ৯৯ শতাংশ।’

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে ভতুর্কি দেওয়া হয় ৫৯২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা উৎপাদিত হয় ৪ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোটের শেষ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠির হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছি।

সব ঘর আলোকিত করেছি। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।’

সূত্র : রাইজিংবিডি.কম