টাঙ্গাইলে ৬ মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৯ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

News News

Desk

প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : সম্প্রতি টাঙ্গাইলে সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে। এ সকল দুর্ঘটনায় বেড়েছে প্রাণহানির সংখ্যাও। বিশেষ করে চলতি বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম।

চলতি মাসেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দুজন এসএসসি ও দুজন দাখিল পরীক্ষার্থী মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।

গত ৬ মাসে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অন্তত ৯ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। জেলার সবচেয়ে দুর্ঘটনা প্রবণ উপজেলা হচ্ছে সখীপুর।

এখানে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক অপরাধ সংগঠনের প্রবণতাও বেড়েছে।

টাঙ্গাইল জেলার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলার সচেতন মহল।

জানা যায়, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আমুয়াবাইদ এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নাঈম খান (১৫) ও শাকিল খান (১৫) নামে চলমান দাখিল পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় পাকুটিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রানা খান (১৬) আহত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

জেলার সখীপুর উপজেলায় আদনান (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়। পরে সে গত ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর শনিবার জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিয়াম (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। গত ২৫ জুন সখীপুরে মোটরসাইকেল ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শামীম আল মামুন (২৫) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

গত ৩ মে ধনবাড়ীতে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে উপজেলার হরিপুর পাতলা চড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে আল-আমিন (১৫) ও আছর আলীর ছেলে রিপন (১৫) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। গত ২০ মার্চ মির্জাপুরে ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী রুপম খান (১৮) ও নিশাত খান (১৮) নামের দুই কলেজছাত্র নিহত হয়।

এই সব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এই সব ঘটনায় অকালে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হচ্ছে অনেক ছাত্রকে। এ ছাড়াও সম্প্রতি জেলায় মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক অপরাধ সংঘটনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।

মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজ থেকে সদ্য এইচএসসি পাস করা আজহারুল হাবিব বলেন, কিশোর বয়সের ছেলেদের মধ্যে এক ধরনের হিরোইজম কাজ করে, অনেক সময় তারা পরিবারের অনুশাসন মানতে চায় না।

মোটরসাইকেল পেলে তারা ওভার স্পিডে চালাতে চায়। বিশেষ করে যারা বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের মোটরসাইকেল নিয়ে মাঝে মাঝে চালায়, তাদের মোটরসাইকেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। ফলে এরাই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে বেশি।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ঝান্ডা চাকলাদার বলেন, স্কুল-কলেজের মোটরসাইকেল আরোহী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই মোটরসাইকেলের রেসিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ফলে অকালে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে আমাদের সংগঠন বিভিন্ন ফোরামে কাজ করছে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জয়ব্রত পাল বলেন, জেলায় প্রয়োজনরে তুলনায় পুলিশ প্রশাসনে জনবল অপ্রতুল। তারপরেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চেকপোস্ট বসিয়ে টিনএজার মোটরসাইকেল আরোহীদের মোটিভেশনাল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

টাঙ্গাইল শহরের জন্য পৃথক একটি টিম প্রতিনিয়ত টহল কার্যক্রম চালাচ্ছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা মোটরসাইকেলকে কেন্দ্র করে যেন কোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বশীর উদ্দীন খান বলেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

এ ছাড়া পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক কিশোররা মোটরসাইকেল প্রতিযোগিতা করে থাকে। ফলে বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।

সূত্র : দেশ রূপান্তর