প্রথম দিনেই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বিআরটিএ

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:৩৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : বাস ভাড়া বৃদ্ধির পরও রাজধানীর প্রতিটি সড়কে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে গণ-পরিবহনগুলো। অথচ, যাত্রীদের কাছ থেকে যেন বাড়তি ভাড়া না নেওয়া হয়, সে উপায় বন্ধ ও ওয়েবিল নামে যাত্রীদের পকেট কাটার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

কিন্তু প্রথমদিনই ব্যর্থতা দেখিয়েছে সরকারি সংস্থাটি।

যাত্রীরা বিআরটিএ’র ঘোষণাকে ফাঁকাবুলি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, হুঁশিয়ারি অনুসারে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি বিআরটিএ। সরেজমিনেও খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়েনি বিআরটিএ গঠিত দশটি ভ্রাম্যমাণ টিমের। কিন্তু দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দাবি করছেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন।

রোববার (৭ আগস্ট) সরেজমিনে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, আজিমপুর, পল্টন, মহাখালী ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

কোনো বাসে পাওয়া যায়নি ভাড়ার তালিকা
নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের পর সড়কে বাস নামলে তাতে ভাড়ার তালিকা থাকার কথা। কিন্তু নতুন ভাড়া নির্ধারণের পরদিন সড়কে ১০টি রুটের একাধিক গাড়িতে উঠে দেখা গেছে- কোনোটিতেই তালিকা নেই। এমনকি পুরান তালিকাও তুলে ফেলা হয়েছে।

গাজীপুর রুটের আজমেরী, টঙ্গী-গাজীপুরা রুটের ভিক্টর পরিবহন, সাভার রুটের সাভার পরিবহন, মিরপুর রুটের বিহঙ্গ ও তানজিল পরিবহন, মিডলাইন, ট্রান্স সিলভা পরিবহন, নগর পরিবহনের একাধিক গাড়িতে উঠে নতুন ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায়নি।

এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিবহন বিআরটিসির বাসেও লাগেনি নতুন ভাড়ার তালিকা। নতুন ভাড়া কার্যকর হলেও প্রতিটি পরিবহনেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

একাধিক বাস শ্রমিকের কাছ থেকে জানা গেছে, মালিকদের পক্ষ থেকে ভাড়ার তালিকা কবে দেওয়া হবে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

মালঞ্চ পরিবহনের চালক মো. শামীম বলেন, ভাড়ার তালিকা টাঙানো নিয়ে মালিক কিছু বলেনি। আমরাও জানি না ঠিকঠাক।

মালিক পক্ষ জায়গাভেদে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে বলেছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবহনের কর্মীরা।

প্রথমদিনে বিআরটিএ’র পদক্ষেপ
বিআরটিএর পক্ষ থেকে রোববার (৭ আগস্ট) রাজধানীতে ১০টি টিম কাজ করেছে দাবি করা হলেও গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব এলাকায় কোনো অভিযান দেখা যায়নি। সরেজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থেকেও এমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।

বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেছেন, কিলোমিটার প্রতি দুই টাকা ৫০ পয়সার বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না। যারা নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেক বাসে অন্তত চারটি জায়গায় ভাড়ার তালিকা থাকতে হবে। না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তার ভাষ্য অনুসারে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বিআরটিএ কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল কোর্ট অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অপরাধে ১৫টি মামলায় ৩২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও বনশ্রী পরিবহনের একটি সিএনজি চালিত বাসকে ডিজেল চালিত বলে ভাড়া নেওয়ার অপরাধে ডাম্পিং করা হয়েছে।

কিন্তু সামগ্রিক অরাজকতার বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র পদক্ষেপকে মূল্যহীন বলছে যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়েবিলের নামে যেভাবে যাত্রীদের পকেট কাটে পরিবহনগুলো
রাজধানীতে চলা বেশিরভাগ বাস একটি নির্ধারিত স্টপেজ থেকে ছাড়ার পর গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন পয়েন্টে মালিকদের নিয়োগ করা চেকার থাকেন। তারা ওই পয়েন্ট পর্যন্ত কতজন যাত্রী উঠলেন, কত ভাড়া দিলেন তার হিসাব রাখেন। প্রতিটি স্টপেজে কতজন যাত্রী আছে সেই হিসাবটা যাচাই করে ওই শিটে লিখে দেন চেকার। দিন শেষে এই হিসাব অনুযায়ী বাস মালিকদের প্রতিদিনের ভাড়ার টাকা বুঝিয়ে দেন শ্রমিকরা।

অবশ্য যতবার চেক হয় ততবার কোথাও দশ টাকা, কোথাও আবার ২০ টাকা পর্যন্ত চেকারের হাতে গুজে দিতে হয় কন্ডাক্টরকে। এর বিনিময়ে অবশ্য সংখ্যা কিছুটা কম লিখে দেন চেকাররা। বিআরটিএ বলছে, ওয়েবিল বলতে কোনো কিছু নেই। তারপরও দিনের পর দিন চলছে এই অবৈধ নিয়ম।

অভিযোগ আছে, শ্রমিকরা ওয়েবিল বন্ধ চাইলেও মালিকরা এটি চালু রাখতে চান। তাই ঘোষণা দিলেও এটি বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেই মালিক সমিতির। ঢাকার বিভিন্ন রুটের তথ্য অনুযায়ী, সদরঘাট থেকে মিরপুর রুটে চলা বিহঙ্গ, তানজিল, ভিক্টর, সাভার পরিবহন ওয়েবিলে চলে।

আবার মোহাম্মদপুর থেকে চলা বেশিরভাগ বাসে ওয়েবিলে আছে। রয়েছে সাভার থেকে চিটাগং রোড, নারায়ণগঞ্জ রুটের বেশিরভাগ বাসেও। বিমানবন্দর থেকে আজিমপুরে চলা বিকাশ পরিবহন, আজিমপুর থেকে কুড়িলে চলা দেওয়ান ও স্মার্ট উইনার ওয়েবিলে চলে বলে জানা গেছে।

ভাড়া বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ অনিয়ম ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দিন শেষে তার প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম