দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন করতে পারবে না ইসি: ফখরুল

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে তার নির্দেশের বাইরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই ইসি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, বর্তমান সরকারের অধীনে কখনোই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ যেটা করেছে গত তিনটা টার্মে, এটাকে একটা নির্বাচনী গণতন্ত্র বলে তারা নাম দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা একদিকে গণতন্ত্রের একটা মুখোশ পড়ে থাকে, আরেক দিকে নির্বাচনী মুখোশ দেখিয়ে ক্ষমতাটা ধরে রাখে।

যেটা অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হাইব্রিড রেজিম বলেছেন। এই হাইব্রিড রেজিমের ফলে জনগণ তাদের ভোটাধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছেন। তার অর্থই হচ্ছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, ইসির কোনো অধিকার বা এখতিয়ারই নেই, সম্ভবও না যে, সরকারের নির্দেশ ছাড়া তারা নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।

সোমবার (২৫ জুলাই) দলের স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এতে সভাপতিত্ব করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ আইনে স্থাপিত ১৯ টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২/৩ বছর পর বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ছাড়াই তা এখনো চলমান আছে। বেশ কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই তিন বছর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে।

সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্ছা প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতি পরায়ন ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

‘বিদ্যুত খাতে রাষ্ট্রীয় দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশি ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের নীতি একটাই- তা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বিদেশে সেই সম্পদ পাচার করা। যারা এই ধরনের নীতি অনুসরণ করে দেশের সম্পদ লুট করেছে সেই রকম দেশের নজির আছে।

অতি সম্প্রতি শ্রীলংকাতে সেই রকম ঘটনা ঘটেছে। জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে এসে তাদের উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে তারা সরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। একইভাবে নাইজেরিয়া ও ভেনেজুয়েলাতে একই অবস্থা আমরা দেখেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সম্প্রতি ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে তাদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশের সবাই অপরাধী- এই মন্তব্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজেবি) মহাপরিচালক নিরব থাকায় তীব্র সমালোচনা করা হয়। বিএনপি মনে করে, সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ অপরাধী হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য আমরা দাবি করছি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা যুক্ত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক, অসামাজিক কার্যকলাপকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে।

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভ্যয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি ও দেশে দারিদ্র্যতার হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক ৪ গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় নিন্দা জানানো হয়।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম