শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী বুলবুল খুনের ঘটনায় মামলা, আটক তিন

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ খুনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুস্কৃতিকারীদের আসামি করে এ মামলা করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বুলবুল নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন।

নিহত বুলবুল আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নরসিংদী জেলায়।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত দুস্কৃতিকারীদের আসামী করে জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করছেন। বুকের বামপাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণে বুলবুলের মৃত্যু হয়েছে বলে রেজিস্ট্রার এজহারে উল্লেখ করেছেন।

আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিত অভিযোগে রেজিস্ট্রার উল্লেখ করেন, সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বুলবুল আহমদ বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলা নামক স্থানে বেড়াতে গিয়ে একাধিক দুষ্কৃতিকারীর কবলে পড়েন।

অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে আহত হয় সে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার ও পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হত্যাকান্ডের পর খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।

তদন্ত কমিটি গঠন:
বুলবুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম তদন্ত কমিটি গঠনের কথা নিশ্চিত করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, শাহরপরাণ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিজানুর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শফিকুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল।

অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বুলবুল নিহতের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কি কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেটা জেনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তখন হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যাবে।’

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ভিসি মহোদয় মৌখিকভাবে বলেছেন এ ঘটনার কারণ উৎঘাটন করতে। আমরা মৌখিক অনুমতি পেয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। যতো দ্রুত সম্ভব আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।

হাসপাতাল থেকে ‘উধাও’ বান্ধবী:
বুলবুল আহমেদকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে ছুটে যান তার বান্ধবী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মার্জিয়া ঊর্মি। বুলবুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেলের দিকে কাউকে না বলে উর্মি হাসপাতাল থেকে ‘উধাও’ হয়ে যান।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, উর্মিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সে কাউকে না বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে। তার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।

এদিকে, বুলবুল খুনের খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। সোমবার রাতেই তারা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এছাড়া ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে ফের জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এসময় বৃষ্টিতে ভিজে তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বুলবুলের খুনিদের সনাক্ত করে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ চার দফা দাবি জানান।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- বুলবুল খুনের ঘটনা পরিকল্পিত কি না তা খুঁজে বের করা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। নিহত বুলবুলের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বুলবুলকে যে স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে সেখানে তার স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পেছনে গাজীকালুর টিলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বুলবুলকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন