উত্তাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

News News

Desk

প্রকাশিত: ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বুধবার (২০ জুলাই) থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকালে থেকে একাধিক মিছিল ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সেসব সমাবেশ থেকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো মানববন্ধনের আয়োজন করে। বিকালে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এসব কর্মসূচি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো হয়।

রবিবার (১৭ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হতাশার মোড় থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। পাঁচজন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ করা হয়। পরদিন প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী।

এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একই দিন হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাও করেন। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বুধবার (২০ জুলাই) গভীর রাত অবধি হলের বাইরে বিক্ষোভ দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। পরে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টায় একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সামনে মিছিল শুরু করলে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে তাতে যোগ দেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু চত্বরে আরেক দল শিক্ষার্থী নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একই সময়ে শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন কয়েকশ শিক্ষার্থী।

এ সময় তারা ‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি?’, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে নিরাপত্তা নাই’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘নাম অবশ্যই প্রশাসনের জানা, তবে মামলা কেন অজ্ঞাতনামা’ এসব স্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাজিয়া আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রীকে নিপীড়নের যে ঘটনার বিচার চার ঘণ্টার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল সে ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কিছু করতে পারেননি। আমরা তো ক্যাম্পাসকে আমাদের বাড়ির মতো মনে করি।

এখানে প্রশাসন আমাদের অভিভাবক। আমাদের বাড়িতে আমাদের আমাদের অভিভাবকরাই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এরকম অভিভাবক থেকেই বা কী লাভ? ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

নুজরাত জেবিন সুমাইয়া নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি । এভাবেই আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘যেই সময় ঘটনা ঘটেছে সেই নির্দিষ্ট সময়ের প্রত্যেকটি পয়েন্টের সিসিটিভি ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। ফুটেজের প্রত্যেক সেকেন্ড গুরুত্ব সহকারে চেক করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্তে প্রশাসন এবং পুলিশ একযোগে কাজ করছে। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা তৎপর রয়েছি।

এর আগে গত বুধবার (২০ জুলাই) রাত সোয়া ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান নেন ছাত্রীরা। সে সময় তারা চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও মেডিকেল সেন্টারে প্রবেশের সময়সীমা তুলে নেওয়া ও ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বর্তমান যৌন নিপীড়ন সেল ভেঙে নতুন সেল গঠন, সেলে জমা অভিযোগগুলো চার কর্মদিবসের মধ্যে সমাধান।

আন্দোলনকারীরা বলেন, চার কর্মদিবসের মধ্যে তাদের দাবি মানা না হলে প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে পারে। তারা না পারলে সমাধান করতে হবে উপাচার্যকেই। তিনি ব্যর্থ হলে তাকেও নিজের পদ ছাড়তে হবে।

এদিকে গতকাল ঢাকায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খুলে ফেলা লোককে, টিকটক করা ব্যক্তিকে মুহূর্তের মধ্যে চিহ্নিত করে আটক করা যায়, শাস্তি দেওয়া যায়। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীর ওপর নিপীড়নকারী যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেই পাঁচজন অপরাধীকে খুঁজে বের করতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন!

ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত দাবি করে শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে সরকারি পেটোয়া বাহিনী- সোনার ছেলে ছাত্রলীগ যুক্ত। এ ঘটনার সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিও যুক্ত! যার কারণে প্রক্টর খুঁজে পাচ্ছেন না কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যখন অভিযোগ দিতে যায় তখন নানাভাবে তাকে নিরুৎসাহিত করা হয়; চুপ থাকতে বলা হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ-মার্কসবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজীব কান্তি রায় বলেন, ‘সারা দেশে যেভাবে ধর্মীয় কারণে এবং নানানভাবে নিবর্তনমূলক আইন তৈরি করে নারীদের ক্রমাগত সংকুচিত করা হচ্ছে, তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে।

একই জায়গায় পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, ‘ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের আখড়া বানিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করে পাঁচজন মিলে তার ভিডিও ধারণ করেছে। চবি শাখা ছাত্রলীগের নেতারা সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বাধা প্রদান করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সমর্থন দিয়ে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার ভেতরে কালপ্রিটদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা না হলে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠবে।

সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে পূর্ণ সংহতি জানাই। ছাত্রলীগের দোষী শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।

সূত্র : দেশ রূপান্তর