সাভার ও আশুলিয়ায় দিনভর সংষর্ষে আহত ৪০

News News

Desk

প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : সাভার ও আশুলিয়ার বেশ কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংষর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে পৃথক এসব সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সকাল সাড়ে ৮টায় আশুলিয়ায় নরসিংহপুর এলাকার শ্রমিকরা একজোট হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে। এসময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ বাধে।

পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে টিয়ারশেল ছোড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিনত হয় পুরো এলাকা। এতে আহত হয় ৪০ জন শ্রমিক।

সকাল ৯টায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে জামগড়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। জামগড়া এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকরা বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর সড়ক অবরোধ করে বেশকিছু যানবাহনে ভাঙচুর করে। তারা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

এতে আতংকিত হয়ে জামগড়া এলাকার সাভার ও আশুলিয়ার অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে ওই সব কারখানা থেকে শ্রমিকরা বের হয়ে এসে রাস্তায় অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশ শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের সাথে সংঘর্ষ বাধে।

সুজন নামের আন্দোলনরত এক শ্রমিক বলেন, ‘সাড়ে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। এ দিয়া চলা যায় না। সবকিছুর দাম বাড়তি। তাই বেতন বাড়ানোর জন্য সবাই সড়কে আইছে।’

বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০ টি যাত্রীবাহী বাসে ভাংচুর চালানো হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আন্দোলনরত শ্রমিক এমদাদ হোসেন রনি বলেন, সকালে কারখানায় সবাই আসেন। মেশিন বন্ধ করে তারা বসে ছিলেন। পরে অন্য কারখানার শ্রমিকরা যখন বেতন বাড়ানোর দাবিতে সড়কে নামেন, তারাও সড়কে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দিয়েছে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এটি করা হয়।

ঢাকা শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সকাল থেকে জামগড়া এলাকায় শিল্প পুলিশ ও আশুলিয়ায় থাকা পুলিশের প্রায় ৩০টি দল কাজ করছে। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরে যেতে বলা হয়। তবে তারা শোনেননি। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে সাভারের হেমায়েতপুরের পদ্মারমোড় এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক কাজে যোগদান না করে ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায় তারা।

ঢাকা শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহামুদ জনি বলেন, বেতন ভাতার দাবিতে কয়েক দিন ধরেই তেতুঁলঝোড়া ও হেমায়েতপুর পদ্মার মোড়ের দীপ্ত অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সকাল ৮টার দিকে ওই কারখানার কিছু শ্রমিক আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালিয়ে শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন।

এ সময় দুটি গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানার ছুটি ঘোষণা করেন। পরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে।

সেখানে পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাড়তি নিরাপত্তায় অতিরিক্ত শিল্প-পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোটার্স অ্যাসোয়িশন (বিজিএপিএমইএ) চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, কয়েকদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করে আসছিল।

আজ দিনব্যাপী আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর ও কারখানার সামনে সড়কে অগ্নিসংযোগ করে শ্রমিকরা। এভাবে চললে কারখানা আর চালু করা সম্ভাব না।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন