রোটেশনে এ যাত্রায় টিকে গেছে ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ সার্ভিস

News News

Desk

প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৩

রাহাত খান : রোটেশন করে এ যাত্রায় টিকে গেছে বরিশাল-ঢাকা নৌ সার্ভিস। এখন লোকসান কাটিয়ে ব্যবসার ধারায় ফিরেছেন লঞ্চ মালিকরা। বিশেষ উৎসব ছাড়া রোটেশন অব্যাহত থাকলে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ঐতিহ্যবাহী এই লঞ্চ সার্ভিস চালু থাকবে।

রোটেশনে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেয়া গেলেও মালিকদের লাভ হয় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। লঞ্চ সার্ভিসকে আরও কার্যকর করতে গুলিস্তান থেকে সদর ঘাট পর্যন্ত একটা ফ্লাইওভার চান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।

তুলনামূলক কম ভাড়া, আরামদায়ক এবং নিরাপদ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের ঢাকামুখী যাত্রীদের প্রথম পছন্দ ছিলো লঞ্চ। যাত্রীদের আগ্রহ থাকায় পাল্লা দিয়ে আধুনিক লঞ্চের বহর নামিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। চাহিদাও ছিলো বেশ।

ঢাকা ও বরিশালপ্রান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি বিশাল বিশাল লঞ্চ পরিবহন করতো হাজার যাত্রী। ঈদ মৌসুম ছাড়াও সাধারণ সময়ে লঞ্চের একটি কেবিন টিকেট পেতে রীতিমতো তদবির করতে হত যাত্রীদের।

গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রীতে ধ্বস নামে। পদ্মা সেতু দেখা হয়ে গেলে যাত্রীরা আবার লঞ্চে ফিরবেন বলে আশায় ছিলেন মালিকরা। কিন্তু যাত্রীরা আর লঞ্চে ফেরেননি। মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় সড়ক পথে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ তৈরী হওয়ায় বেশীরভাগ যাত্রী সড়ক পরিবহনে ঝুঁকে পড়েন।

ফলে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চগুলো যাত্রী স্বল্পতায় ধুকতে থাকে। এরপরও ৪ থেকে ৫টি লঞ্চ উভয়প্রান্ত থেকে ছেড়ে যেত যাত্রী স্বল্পতা নিয়ে। প্রায় প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে গুনতে ছোট কোম্পানীগুলো তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দেয়।

বড় কোম্পানীগুলো লোকসান গুনেও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করে। এ অবস্থায় লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে জরুরী সভা করে লঞ্চ মালিক সমিতি।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে উভয় প্রান্ত থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ২টি করে লঞ্চ। যাত্রীর চাপ বাড়লে বাড়িয়ে দেয় হয় লঞ্চ। দুটি করে লঞ্চ ছাড়ায় প্রত্যাশিত যাত্রী পাচ্ছে লঞ্চগুলো। কেবিনও হচ্ছে পরিপূর্ণ।

রবিবার ঢাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী নিয়ে বরিশাল আসে পারাবত কোম্পানীর ২টি লঞ্চ। দুটি লঞ্চের কেবিনও ছিলো পরিপূর্ণ।

এর আগে পূজার বন্ধ হওয়ায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার এবং শুক্র ও শনিবার উভয় প্রান্ত থেকে ছেড়ে যায় যথাক্রমে ৪টি ও ৩টি করে লঞ্চ। সবগুলো লঞ্চ যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিলো।

রবিবার (২২ অক্টোবর) বরিশাল আসা এমভি পারাবত-১১ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম জানান, যাত্রী আকর্ষণ করতে ৪০৯ টাকার ডেক যাত্রী ভাড়া ৩০০ টাকা এবং ৩ হাজার ২শ’ টাকার ডবল কেবিন ২ হাজার ও ১ হাজার ৬শ’ টাকার সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া আদায় করছেন ১ হাজার টাকা। বিশেষ উৎসব ছাড়া উভয়প্রান্ত থেকে ২টি করে লঞ্চ ছাড়লে আপাতত ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ সার্ভিসটি টিকে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সহসভাপতি মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, রোটেশনের কারণে একটি লঞ্চ মাসে ৬টি অর্থাৎ আপ-ডাউন মিলে ১২ ট্রিপ পেয়ে থাকে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়। বর্তমান ব্যবস্থায় লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনটা নিয়মিত দেয়া যায়।

মালিকদের কিছু থাকে না। তিনি লঞ্চে যাত্রী বাড়াতে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি জানান। এতে লঞ্চ সার্ভিস যৌবন ফিরে পাবে এবং গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ট্রাফিক জ্যামও কমবে বলে প্রত্যাশা করেন বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিন্টু।