প্রদানকৃত প্রতিশ্রুতি রক্ষা মুমিনের গুন

News News

Desk

প্রকাশিত: ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তাদের কর্মপদ্ধতি এমন হয় যে, তারা আল্লাহকে প্রদত্ত নিজেদের অঙ্গীকার পালন করে এবং তাকে প্রদানকৃত প্রতিশ্রুতি মজবুত করে বাঁধার পর ভেঙে ফেলে না।’ ‘তাদের নীতি হয়, আল্লাহ যেসব সম্পর্ক ও বন্ধন অক্ষুণœ রাখার হুকুম দিয়েছেন সেগুলো তারা অক্ষুণœ রাখে, নিজেদের রবকে ভয় করে এবং তাদের থেকে কড়া হিসাব না নেওয়া হয় এই ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে।

‘তাদের অবস্থা হয় এই যে, নিজেদের রবের সন্তুষ্টির জন্য তারা সবর করে, নামাজ কায়েম করে, আমার দেওয়া রিজিক থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খরচ করে এবং ভালো দিয়ে মন্দ দূরীভূত করে। আখেরাতের ঘর হচ্ছে তাদের জন্যই। অর্থাৎ এমন সব বাগান যা হবে তাদের চিরস্থায়ী আবাস।’ সুরা রাদ : ২০-২২

উল্লিখিত তিনটি আয়াতের মধ্যে ২০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘আর তাদের কর্মপদ্ধতি এমন হয় যে, তারা আল্লাহকে প্রদত্ত নিজেদের অঙ্গীকার পালন করে এবং তাকে প্রদান করা প্রতিশ্রুতি মজবুত করে বাঁধার পর ভেঙে ফেলে না।’ অর্থাৎ মানবসৃষ্টির শুরুতে আলমে আরওয়াহে (রুহের জগতে) আল্লাহর প্রতি ইমান ও বন্দেগির ওয়াদা নিয়েছিলেন স্বয়ং আল্লাহ।

আয়াতে সেটাই বোঝানো হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের প্রকৃতির মধ্যে এই অঙ্গীকার নিহিত। যখন আল্লাহর সৃজনী কর্মের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করে প্রতিপালিত হতে থাকে তখনই আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ওয়াদা পাকাপোক্ত হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের কাছ থেকে জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন।’ সুরা তওবা : ১১১

২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিনদের নীতি হলো, আল্লাহ যেসব সম্পর্ক ও বন্ধন অক্ষুণœ রাখার হুকুম দিয়েছেন, সেগুলো তারা অক্ষুণœ রাখে, নিজেদের রবকে ভয় করে এবং তাদের থেকে কড়া হিসাব না নেওয়া হয় এই ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে।’ বর্ণিত আয়াতে সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ এবং ছিন্ন করার কঠিন হিসাবের ইঙ্গিত রয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে সামগ্রিক জীবনে কল্যাণ নিশ্চিত।

পারিবারিক সম্পর্ক : মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান নিয়েই পরিবার। সুখ ও দুঃখে পরিবারের সদস্যরাই বেশি অংশীদার হয়। তাই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর ফায়সালা হলো যে, একমাত্র তার ইবাদত করবে তারপর বাবা-মায়ের খেদমত করবে।’ সুরা বনি ইসরাইল : ২৩

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবিরা গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, বাবা-মায়ের অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা এবং মিথ্যা শপথ করা।’ সহিহ বোখারি

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তার নাক ধুলায় মলিন হোক। অর্থাৎ ধ্বংস হোক, যে তার মা-বাবার একজন বা দুজনকে পেল কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেনি।’ সহিহ মুসলিম

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর সবকিছুই সম্পদ, আর সর্বোত্তম সম্পদ হলো সৎকর্মশীল স্ত্রী।’ সহিহ মুসলিম

সামাজিক সম্পর্ক : হজরত জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সম্পর্ক স্থাপনকারী ওই ব্যক্তি নয় যে, সদাচরণের পরিবর্তে সদাচরণ করল বরং সে ব্যক্তি যে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাল।’ সহিহ বোখারি

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে রিজিক ও হায়াতের মধ্যে বরকত চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখে।’ মুত্তাফাকুন আলাইহি

সাংস্কৃতিক সম্পর্ক : জীবন পরিচালনার রীতিনীতি হলো সংস্কৃতি। তাই আত্মীয়স্বজনের বাইরে আদর্শিক ও পরিচিত মানুষের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখা উচিত।

সম্পর্ক শুধু আল্লাহর জন্য : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শুধু আল্লাহর জন্য যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে, তাদের আখেরাতে এমন মিনারে রাখা হবে, যা দেখে নবী ও শহীদরা ঈর্ষান্বিত হবেন।’ মুত্তাফাকুন আলাইহি

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিজের জন্য যা ভালোবাসে, তা অন্যের জন্য ভালোবাসে না সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না।’ মুত্তাফাকুন আলাইহি

২২ নম্বর আয়াতে দয়াময় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তাদের অবস্থা হয় এই যে, নিজেদের রবের সন্তুষ্টির জন্য তারা সবর করে, নামাজ কায়েম করে, আমার দেওয়া রিজিক থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খরচ করে এবং ভালো দিয়ে মন্দ দূরীভূত করে। আখেরাতের গৃহ হচ্ছে তাদের জন্যই। অর্থাৎ এমন সব বাগান যা হবে তাদের চিরস্থায়ী আবাস।’ মুমিনরা সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সবর করবে। সবরের অর্থ হলো

ক. নিজের প্রবৃত্তি ও আকাক্সক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা।

খ. আবেগ ও ঝোঁক-প্রবণতাকে সীমার মধ্যে রাখা।

গ. আল্লাহর নাফরমানিতে লোভে পা পিছলে না যাওয়া।

ঘ. আল্লাহর হুকুম পালনে কষ্ট সহ্য করা।

কল্যাণ নিহিত যেখানে : ধৈর্যবান মুমিনদের জন্য সার্বক্ষণিক কল্যাণ নিহিত। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনদের বিষয়টি আশ্চর্যের। যখন কোনো সুসংবাদ আসে, মুমিন শোকরিয়া আদায় করে, যা তার জন্য কল্যাণকর। আর যখন বিপদ আসে, মুমিন তখন সবর করে এটাও তার জন্য কল্যাণকর।’ সহিহ মুসলিম

বিপদে সবর : সব ধরনের বিপদে সবর করা আবশ্যক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলিম জীবনে বিপদ, মুসিবত, চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট এমনকি কাঁটা ফুটলেও আল্লাহ গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ মুত্তাফাকুন আলাইহি

ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ : সবরের বিপরীত ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করা সবরকারীর জন্য জরুরি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সে শক্তিশালী নয় যে কুস্তি খেলতে এগিয়ে। বরং সেই শক্তিশালী যে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।’ মুত্তাফাকুন আলাইহি

সূত্র : দেশ রূপান্তর