থানায় আসামির মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ বরখাস্ত

News News

Desk

প্রকাশিত: ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি চুরির মামলার আসামি ছিলেন। শনিবার (২০ আগস্ট) থানা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এই ব্যক্তির নাম সুমন শেখ (২৫)। তার বাসা পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডে। স্ত্রী ও ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি।

থানা পুলিশের দাবি, সুমন হাজতখানার লোহার গ্রিলের সঙ্গে গলায় পরনের প্যান্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সিসি (ক্লোজ সার্কিট) টিভি ক্যামেরায় এ ঘটনার ধারণকৃত ফুটেজ রয়েছে।

এ ঘটনায় সুমনের স্বজন ও এলাকাবাসী গতকাল বিকেলে হাতিরঝিল থানার সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে সুমন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। পরে দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্তের পর সন্ধ্যায় অবরোধ তুলে নেন তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক সাংবাদিকদের জানান, হাতিরঝিল থানায় সুমন শেখ নামে এক আসামির আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এছাড়া শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাতে দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইউনিলিভার লিমিটেডের পিউরিটে চাকরি করতেন সুমন শেখ। পিউরিটের অফিস থেকে ৫৩ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা হয়।

এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন। পরে এই তিন জনের দেওয়া তথ্য ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে সুমন শেখের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তাকে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর সুমন শেখকে নিয়ে রাতে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়।

সুমন শেখের আত্মহত্যার বর্ণনা দিয়ে ডিসি তেজগাঁও বলেন, অভিযান শেষে সুমন শেখকে রাতে হাতিরঝিল থানায় রাখা হয়। শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এই ফুটেজ নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।

সুমনকে মারধর করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সুমনের স্বজনরা জানান, গত বছর সুমনের মা মারা গেছেন। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়াপদা রোডের বাসায় মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন তিনি। বিকেল ৪টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ চুরির মামলায় তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থানা হাজতখানায় রেখে দেওয়া হয় তাকে।

সুমন শেখের মৃত্যুর বিষয়ে তার স্বজন মো. সোহেল আহমেদ জনান, গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে একটি চুরির মামলায় সুমন শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার (২০ আগস্ট) থানা থেকে তাদের জানানো হয় সুমন আত্মহত্যা করেছেন।

তারা থানায় আসার পর ওসি আবদুর রশিদ তাদের হাজতখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, থানা হাজতে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ডিউটিতে ছিলেন কী করেছেন তারা। তাদের দায়িত্ব অবহেলায় সুমন আত্মহননের সুযোগ পেয়েছেন। পুলিশ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থানায় যে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন তাদের হাজতখানায় আসামিদের দেখভাল করার কথা। আসামি ভেতরে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়েছে কি না সেটিও দেখার দায়িত্ব তাদের।

সূত্র : দেশ রূপান্তর