চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি, ধর্মঘট প্রত্যাহার

News News

Desk

প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : দৈনিক ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে কর্মবিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা।

শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে সরকারের এই প্রস্তাব শ্রমিকেরা মেনে নিয়েছেন।

নিপেন পাল আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রস্তাবকে সম্মান দেখাতে গিয়ে প্রস্তাবিত ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শ্রমিকরা। রোববার থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। তাছাড়া কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে ফিরে চা শ্রমিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।

মৌলভীবাজারের জেলাপ্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নজরে নিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে।

তাছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও অধিদপ্তরের সচিব মহোদয়ের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান দেখিয়ে ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে রোববার থেকে কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে ফিরে চা শ্রমিকদের সঙ্গে জুম মিটিংয়ে আলোচনা করবেন। সেই সময় মন খুলে কথা বলতে পারবেন চা শ্রমিকরা। ফলে তারা আশ্বস্ত হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন।

শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা তিনটায় শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে শ্রম অধিদপ্তর। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদসহ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং চা-শ্রমিকদের পক্ষে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকরা সিলেট বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে রাখেন। গত ১৩ আগস্ট থেকে দুদিন ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়ে আন্দোলন করছিলেন চা শ্রমিকরা। দাবি না মানায় এরপর তারা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যান।

একই ভাবে মৌলভীবাজারেও চা শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক নেতারা।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আজও আন্দোলন অব্যাহত ছিল। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন ১৪৫ টাকা মেনে নিতে। তাই শ্রমিকরা ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়েছেন।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, জুন মাসে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের বৈঠক হয়। সেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু মালিকপক্ষ ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। শ্রমিক নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ঢাকায় বৈঠকে আরও ৬ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা করা হয়।

এরপর আরও এক মাস পার হলেও মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এর প্রতিবাদে ৯-১২ আগস্ট টানা চার দিন প্রতি দিন দুই ঘণ্টা করে ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিকরা। তারপরও মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় ১৩ আগস্ট থেকে দেশের সব চা-বাগানে শুরু হয় শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।

অবশেষে শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ১৪৫ টাকার প্রস্তাবনা তুল ধরলে শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম