তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা

News News

Desk

প্রকাশিত: ১১:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারী ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাবের কারণে শর্ত সাপেক্ষে কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। চলতি ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

এতে ব্যাংক খাতে জুন শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। গত মার্চে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের এ তথ্য চূড়ান্ত করে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৯ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা এর আগের ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আরও কিছুটা কম ছিল। ২০২২ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত মার্চ শেষে বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছিল খেলাপি। গত মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারী শুরুর পর ২০২০ সাল জুড়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় ছিল। এ সময় গ্রাহকরা এক টাকাও পরিশোধ না করে খেলাপি হওয়ার হাত থেকে রেহাই পান। তবে ২০২১ সালের শুরু থেকে ঋণ আদায়ে ছাড় তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বছরের শেষ দিকে ১৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে আবার খেলাপি মুক্ত থাকার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আবার ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। এবার কিস্তি পরিশোধে বিভিন্ন ধাপে ধাপে শর্ত সাপেক্ষে ঋণের একটি অংশ পরিশোধের ভিত্তিতে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর ফলে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তির একটি অংশ পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সে সুযোগও অনেক ব্যবসায়ী নিতে না পারায় খেলাপি হয়ে পড়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা।

যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২২ শতাংশ। গত মার্চ শেষে এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৬২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। যা এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৬ শতাংশ।

গত মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

তথ্য বিশে­ষণে আরও দেখা যায়, জুন শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। যা ছিল এখাতের বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

এর আগের প্রান্তিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

এ ছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ জুনে ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

যা ছিল এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। গত মার্চে এখাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। তখনও বিতরণ করা ঋণের তুলনায় খেলাপির হার ছিল ১২ শতাংশ।

এদিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গত ১৮ জুলাই ঋণ পুনঃতফসিলে বড় ধরনের ছাড় দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এতে আগের থেকে কম ডাউনপেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৪ বার পুনঃতফসিল করার সুযোগ পান ব্যবসায়ীরা।

ফলে আগামী সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গভর্নর।

সূত্র : দেশ রূপান্তর