বরিশালে খাঁচায় বন্দি ডিসি লেক News News Desk প্রকাশিত: ১০:০২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ বরিশাল : বরিশাল শহরের বুকের মাঝে এক টুকরো নীল জলাধার। চারপাশে গাছপালার সবুজ বেষ্টনী, সেই সবুজে ঘেরা নীল জলাধারের নাম ডিসি লেক। একসময় এ লেক ছিল শহরবাসীর নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা, প্রেমিক-প্রেমিকার নির্ভেজাল আড্ডা, আবার অনেকের কাছে ছিল নিঃসঙ্গতার সঙ্গী। আজ সেই লেক লোহার গ্রীল আর কংক্রিটের দেয়ালের খাঁচায় বন্দি হচ্ছে। দূর থেকে দেখা যাবে, কাছে গিয়েও ছোঁয়া যাবে না। তবে শহরের সুশীল সমাজ মনে করছেন, এটি শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, বরং বরিশালের নাগরিক সংস্কৃতির গলা চেপে ধরা। প্রকৃতিকে বন্দি করে রাখলে সৌন্দর্য টেকে না। আজকের বরিশালে তাই প্রশ্ন একটাই, ডিসি লেক কি খাঁচায় বন্দি হয়ে যাবে, নাকি উন্মুক্ত বাতাসে ফিরবে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য? উন্মুক্ত জায়গাগুলো এভাবে এক এক করে নিরাপত্তার অজুহাতে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়ার ফলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রকৃতিকে উন্মুক্ত রাখতে তারা চাইছেন, প্রশাসনের সহযোগিতা। লেকের চারপাশে দিন কয়েক ধরে চলছে শ্রমিকদের ব্যস্ততা। কেউ গর্ত খুঁড়ছে, কেউ লোহার কাঠামো বসাচ্ছে, কেউ আবার কংক্রিট ঢালাই দিচ্ছে। তৈরি হচ্ছে উঁচু দেয়াল, বসছে গ্রীল। উদ্দেশ্য, লেককে খাঁচায় বন্দি করে ফেলা। প্রশাসনের যুক্তি-লেকের ধারে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা ‘অসামাজিক কর্মকাণ্ডে’ পরিণত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তাই নিরাপত্তার খাতিরেই এই উদ্যোগ। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কাজটি করছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। বরিশাল সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের কেউ কেউ জানান, কয়েক বছর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে তার বাংলোর পাশের লেকটিকে গ্রীল দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সুশীল সমাজের আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায়, যদিও পরে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়। তখন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়েই কাজটি করা হয়েছিল। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। শহরের মানুষ বলছেন উল্টো কথা। লেকের ধারে কিশোর-কিশোরীরা আড্ডা দেয়, সেটি জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিতে বাংলোর আশপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। সামাজিক অবক্ষয়ের যুক্তি তুলে ধরে বর্তমান জেলা প্রশাসক লেকের চারপাশে দেয়াল নির্মাণের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী চার দিন আগে বরিশাল সিটি করপোরেশন গ্রীল বসানোর কাজ শুরু করেছে। চারুকলা বরিশালের সংগঠক সুভাষ চন্দ্র দাসের কণ্ঠে হতাশা, তিনি বললেন, ‘ডিসি লেক শুধু জলাশয় নয়, বরিশালের আত্মার অংশ। রাজা রায় বাহাদুর সড়ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান আর এই লেক সব মিলেই শহরের সৌন্দর্য। গ্রীল দিয়ে লেক ঢেকে দিলে এই সৌন্দর্য ভেঙে পড়বে। কবি হেনরি স্বপন বলেন, ওরা (তরুণ-তরুণীরা) অসামাজিক কিছু করে না, করার সুযোগও নেই। লেকের পাশেই ডিসি বাংলো, চারপাশে পুলিশ পাহারা, মানুষের ভিড়। প্রেমিক যুগলকে অশ্লীলতার দায়ে দোষী বানিয়ে ঐতিহ্যকে খাঁচায় পুরে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। লেকের ইতিহাসও কম পুরোনো নয়। ব্রিটিশ আমলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এন.ডি বিটসন-বেল নির্মাণ করেছিলেন বেলস পার্ক। লেফটেন্যান্ট-গভর্নর আলেকজান্ডার ম্যাকেনজির সফরে উদ্বোধন হয় পার্কের। স্বাধীনতার পর এ জায়গায় সমাবেশ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানসহ দেশের শীর্ষ নেতারা। বেলস পার্কের পাশ দিয়েই চলে গেছে এই লেক। যেটিকে ঘিরেই এখন দ্বন্দ্ব। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী অবশ্য বললেন, নিরাপত্তার কারণেই কাজটি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের অনুরোধে কমিশনার সাহেব অনুমোদন দিয়েছেন। SHARES জাতীয় বিষয়: প্রকাশক : শারমিন সুলতানা সম্পাদক : মো:সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় সহ সম্পাদক : মো:শুভ হাওলাদার। প্রধান উপদেষ্টা : মো: মকবুল হোসেন যুগ্ন উপদেষ্টা : ডা. রিয়াদুল ইসলাম খান বরিশাল ঠিকানা:: বিবির পুকুর পাড় হাবিব ভবন, ৫ম তলা ঢাকা ঠিকানা:: উওরা ১২ নং সেক্টর ৩ নং রোড