সড়কে দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অস্বস্তি তৈরি করছে : সেতুমন্ত্রী

News News

Desk

প্রকাশিত: ১০:০৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। সরকার যোগাযোগ খাতে প্রভূত উন্নতি করেছে।

কিন্তু সড়কে দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অস্বস্তি তৈরি করছে।
বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প (বিআরএসপি) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা নিজেদের সক্ষমতায় পদ্মা সেতু করি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করি, কিন্তু খবরের কাগজে যখন দেখি সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।

একেকটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি যখন মারা যাচ্ছে, তখন মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এত প্রকল্প নিই, উন্নয়নে কাজ করি কিন্তু অস্বস্তি পেয়ে বসে। আমরা যদি এত কাজ করতে পারি, কেন দুর্ঘটনা কমাতে পারব না, তা বোধগম্য নয়। এটাও আমাদের পারতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের পদ্মা সেতুতে সাথে থাকতে পারতো। কিন্তু থাকেনি। এ জন্য বিশ্বব্যাংক একা দায়ী নয়, এর সঙ্গে আমাদের দেশেরই বাঘা বাঘা মানুষ যুক্ত ছিলেন।

এখন বিশ্বব্যাংক সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে। আমাদের বাজেট সহযোগিতা দিচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গৃহীত প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে। এতে আমরা আনন্দিত।

মন্ত্রী বলেন, গৃহীত প্রকল্প সঠিক সময়ে সমাপ্ত হয় না, আমরা কথা বলি বেশি, কাজ করি কম। প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হলে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প, তা সফল হয় না। খরচ বাড়ে। মানুষ বিরক্ত হয়।

আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই। দ্রুত প্রকল্প শুরু করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। জীবন ও পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তিনি আরও বলেন, যে মানুষের জন্য এত কিছু, সে মানুষ যখন জীবিকার জন্য বাইরে যাবে, সে মানুষের আগে নিরাপত্তা দিতে হবে।

তাদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে, তারা যদি নিরাপদে না থাকে, দিন শেষে সুস্থভাবে যদি বাড়িতে ফিরতে না পারে, তাহলে আমাদের এ প্রচেষ্টা বিফলে যাবে।

সড়ক ব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব শরীফা খান। তিনি বলেন, সড়কে শিশু ও কর্মজীবী তরুণদের জীবন যায় বেশি। লন্ডনে দুর্ঘটনায় পতিত হলে দুই মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে হাজির হয়, চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেয়।

আমাদের এখানে তা নেই। একজন মানুষ দুর্ঘটনায় আহত হলে তার পরিবারের খরচ কে বহন করবে, তার চিকিৎসার খরচ কে বহন করবে, কী হবে সেই পরিবারটির, যে পরিবারটির একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিটি আহত বা নিহত হলেন।

তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য প্রকল্প সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়, প্রকল্প শুরু হয়, কিন্তু সময়মতো শেষ হয় না। ফরে একদিকে প্রকল্পের মান যেমন থাকে না, থাকে না উপযোগিতা।

সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ব্যয়। এক প্রকল্প নিয়ে বছরের পর বছর বসে থাকা এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

প্রকল্পবিষয়ক উপস্থাপনায় বলা হয়, সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্জনে সহায়তা করবে।

প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও নাটোর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়কে প্রাথমিকভাবে বসানো হচ্ছে নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ডিভাইস। এতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কোনো চালক পালিয়ে যেতে পারবে না।

প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা পরিমাপ, উন্নত নকশা, প্রকৌশল সুবিধা, গতি প্রয়োগ, জরুরি সেবাসহ ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দুই মহাসড়কে ৩০ শতাংশের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সক্ষম হবে।

সড়ক যোগাযোগ ও হাইওয়ে বিভাগের সচিব সচিব এবিএম আমি উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে আরও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক এবং বিশ্বব্যাংকের সড়ক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম